হারুন আনসারী, ফরিদপুর
ফরিদপুরের মধুখালীতে অবস্থিত ফরিদপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা ইউরিয়া সার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আখ চাষিরা। এসব জমাট বাঁধা সার জমিতে প্রয়োগ করার পর তাতে কাজ হচ্ছেই না, উল্টো তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ মৌসুমের শেষে এই নষ্ট সারের টাকাই তাদের সুদে আসলে পরিশোধ করতে হবে।
বিষয়টি চিনিকল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে এসব আখ চাষি এবার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। পাশাপাশি এই নষ্ট সারের কারণে ফরিদপুর চিনিকলে এবার আখ সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটবে বলে তারা জানান।
ফরিদপুর চিনিকল সূত্র জানায়, এই চিনিকলে তালিকাভুক্ত আখ চাষি রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার। চলতি মৌসুমে এসব আখ চাষিদের মধ্যে প্রায় ৫শ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বিতরণ করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই সার কৃষকেরা হাতে পান।
আখ চাষিদের অভিযোগ, এবারের এই সরবরাহকৃত ইউরিয়া সারের এক-চতুর্থাংশই জমাটবদ্ধ ও কালচে। বেশিরভাগই পাথর বা ইটের আকৃতির। অনেক বস্তায় ময়লা যুক্ত ও নষ্ট হয়ে যাওয়া সারও রয়েছে। যা একবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী। অনেকেই এই সার ব্যবহার না করে বরং বাইরের দোকান থেকে টাকা দিয়ে সার কিনে জমিতে দিচ্ছেন।
তাদের অভিযোগ, ব্যবহার না করায় এসব সার তাদের ঘরেই পড়ে আছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ সেসব ফেরত নিচ্ছে না।
মধুখালীর মেসেরদিয়া এলাকার আখ চাষি মীর আব্দুর রহমান বলেন, আখ চাষের জন্য তাদের মধ্যে ঋণ স্বরূপ এই ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়। বস্তা ভর্তি এই সার বাড়িতে নিয়ে খোলার পর সেখানে বড় বড় পাথরের খণ্ড পান। কালচে ময়লাযুক্ত এই সার জমিতে একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী।
তিনি অভিযোগ করেন, চিনিকলে ফেরত দিতে গেলে এই সার তারা ফেরত নেয়নি। বরং হুমকি দিয়ে বলেছে, নিলে নাও না নিলে ফেলে দাও। তোমাদের মতো চাষি না থাকলেও কিছু হবে না।
কুদ্দুস খান, আলেয়া বেগম ও আইয়ুব মোল্লাসহ আরও কয়েকজন আখ চাষি বলেন, নিজের জমিতে আখ চাষ করি। এই সার তো আমাদের বিনা মূল্যে দেয়নি। উল্টো সারের টাকার সঙ্গে সুদের টাকাসহ ফেরত দিতে হবে।
তারা জানান, এই সার না দিতে পেরে উল্টো বাজার থেকে গাঁটের টাকায় সার কিনে জমিতে দিয়েছি। এখন সার কেনার জন্য অতিরিক্ত টাকার পাশাপাশি এই সারের ঋণের টাকাও আমাদের সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হবে।
ফরিদপুর চিনিকল আখ চাষি কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পরে আমরা কর্তৃপক্ষকে অবগত করি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আখ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি আখ উৎপাদনও কমে যাবে। কৃষকদের সঙ্গে এমন আচরণের বিষয়টি কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা চাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক পাশাপাশি কীভাবে ব্যবহার অনুপযোগী এই সার কৃষকদের দেওয়া হলো সে বিষয়টিও তদন্ত করা হোক।
আরও পড়ুন : ভিক্ষুকের কোলের সেই শিশুর ঠাঁই হচ্ছে ডিসির ঘরে
ফরিদপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল বারী ইউরিয়া সার জমাটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এই সারের গুণগত মান সঠিক রয়েছে বলে দাবি করেন। এবারের মৌসুমে যেসব সার আখ চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অংশ পুরাতন ছিল। সেই সারই জমাট বেঁধে গেছে। কিন্তু গুণগত মান নষ্ট হয়নি।
আখ চাষিদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইউরিয়া সঠিক নিয়মে ছিটালে ফলন নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড