কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের ছেলেসহ দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনায় জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে।
গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এরপর তাদের অভিভাবকের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
এ দিকে, অপহৃত ওই দুই শিক্ষার্থী দিবস ও ধ্রুবকে উদ্ধার করা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিক সূত্র দাবি করেছে- শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের অভিভাবকরা এ নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।
অপহৃতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার ধানমন্ডির ‘ভি এইচ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের’ শিক্ষার্থী তানজীব আল দিবস। অন্যদিকে খালিদ হাসান ধ্রুব ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। তারা উভয়ে সম্পর্কে মামা-ভাগনে। গত ২১ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার তাজমহল রোডের মিনার মসজিদ এলাকা থেকে দিবস ও ধ্রুব অপহৃত হন। একদল অপহরণকারী অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে একটি প্রাইভেট কারযোগে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে উভয়ের হাত-পা-মুখ বেঁধে গাড়ির ভেতরে ফেলে রাখে অপহরণকারীরা। এ সময় গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়।
এ দিকে, দিবসের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অপহরণের পর তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে অপহরণকারীরা। কয়েকটি টেলিটক নম্বর দিবসের বাবা অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এছাড়া অপহরণ নিয়ে ‘থানা-পুলিশ করলে কিংবা পত্রিকায় প্রকাশ করলে মেরে ফেলা হবে’ বলেও কয়েক দফায় হুমকিও দেয়া হয়। সে কারণে পুরো পরিবার এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। তাই দিবসের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে তার পরিবার পরিষ্কার কোনো ধারণা না দিলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে অপহৃতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তবে পুলিশ অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার তার মক্কেল জনৈক দুলু মুঠোফোনে তাকে জানান, দিবসকে অপহরণ করেছে মশিউর রহমান পাপ্পুর গ্রুপ। পাপ্পু অপহরণ, প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের গড ফাদার। তার নামে কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম আদালতে প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মণ্ডল। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায়। আর ঢাকায় মোহাম্মদপুরের ১/৪ ব্লক-এ লালমাটিয়া এলাকায় থাকে সে।’
এই কথিত দুলু আরও দাবি করেন- পাপ্পুর লোকজন ঢাকায় তাকেও অপহরণ করে। ৩৩ দিন অবরুদ্ধ থাকবার পর গত ২০ জানুয়ারি কৌশলে তিনি পালিয়ে আসেন। জিম্মি থাকা অবস্থায় পাপ্পুসহ অন্যদের আলোচনা করতে শোনেন- পরবর্তী টার্গেট অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের ছেলে দিবস।
এ দিকে, দিবসের অপহরণের ঘটনা জানার পর থেকে তার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
কুড়িগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক সরকার জানান, অপহরণের ঘটনা শোনার পর থেকে ঢাকায় পড়া তাদের নিজ নিজ সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি জিডিও করেন অপহৃতদের অভিভাবকরা। পরে শুক্রবার মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের অপহরণে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেতু জানান, মশিউর রহমান পাপ্পু ডাকাতি, প্রতারণাসহ চারটি মামলায় কুড়িগ্রামে জেলহাজতে ছিলেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলাম তাকে জামিন করান। এখনো তার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম আদালতে জিআর, সিআর, মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় মশিউরসহ তার বাবা পলাতক আসামি।
আরও পড়ুন : রাউজানে ইয়াবাসহ ধরা খেল মাদক কারবারি
এ দিকে, ঢাকায় কর্মরত আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানজীমুল ইসলাম প্যারিস জানান, দিবস অপহৃত হওয়ার দিন সকাল ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর এলাকার জনৈক নিশান তাকে ফোন করে জানান, ‘দিবস যেন আজ বাড়ি থেকে বের না হয়।’ এরপর থেকে নিশানের ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলাম জানান, ‘এখনো অপহৃতদের উদ্ধার করার কোনো খবর তারা পাননি। বিষয়টিতে মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।’
এ দিকে, মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মুঠোফোনে অপহরণ মামলার সত্যতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘দিবস ও ধ্রুবকে উদ্ধারের সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।’
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড