• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সিরাজগঞ্জে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ চাষিরা

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

২৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৫৫
সরিষা খেত
সরিষা খেত (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, চলনবিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় সরিষা আবাদকে কেন্দ্র করে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষিরা।

সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌ চাষিরা মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন সরিষাখেতে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাহিদা মতো মধু সংগ্রহ হচ্ছে না বলছেন মৌ চাষিরা। মধু শিল্পের উন্নয়নের জন্য আর্থিক ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন মৌ চাষিরা। এ অঞ্চলে সংগ্রহ করা উন্নতমানের মধু পাইকারি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৯৫ মেট্রিক মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা ও চলনবিলসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে এখন সরিষা। যে দিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা মৌ চাষিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষা মাঠগুলো। মাঠের পাশে শতশত মৌ বাক্স স্থাপন করে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু। হাজার হাজার মৌমাছি প্রতিনিয়ত ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করছে। আর মৌ চাষিরা ৭ থেকে ৮ দিন পর পর সেই বাক্সগুলো থেকে ধোঁয়ার মাধ্যমে মৌমাছি সরিয়ে দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

মৌ চাষিদের স্থাপন করা মৌ বাক্স (ছবি : দৈনিক অধিকার)

তবে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে মৌমাছি বাক্স থেকে বের হয় না। ফলে মধু উৎপাদন কিছুটা কম হলেও লোকসান হবে না বলি জানিয়েছেন মৌ চাষিরা। সরিষা ফুলের মধুতে সুগার বেশি ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার রাঘববাড়িয়া কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, মৌ বাক্স স্থাপনে সরিষার ফলন ভালো হচ্ছে। মৌ চাষিদের খেতে মৌ বাক্স স্থাপনে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে সরিষা খেতে কীটনাশক স্প্রে করতে হতো। গত কয়েক বছর থেকে আমাদের মাঠে মৌ চাষিরা ফসলের খেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ শুরু করে। খেতে মৌমাছির বিচরণ হওয়ায় পরাগায়ন হয়। কীটনাশক স্প্রে করতে হয়নি। রোগবালাই তেমন নাই। ফলে সরিষার আবাদও ভালো হয়েছে। এ বছরও ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মৌ চাষ প্রকল্পের মৌ চাষি শিশির কুমার শাহ জানান, সরিষা মৌসুমে বেশি মধু উৎপাদন হওয়ায় উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে অনেক কম দামে মধু বিক্রয় করতে বাধ্য হন। ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সহজ শর্তে সুদ বিহীন ঋণ সুবিধা পেলে আরও অনেক বেকার যুবক এ পেশায় এগিয়ে আসবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৌ চাষ সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, এবার তিনি আট টন মধু সংগ্রহের টার্গেট নিয়েছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটু সমস্যা হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন।

আরও পড়ুন : জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪

তিনি আরও জানান, মধু সংগ্রহ করলেও বিক্রি নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। দেশের মধু সংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোম্পানিকে মধু না দিলে তারা পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে। এ অবস্থায় সিন্ডিকেট ভেঙে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ এবং বছরে ছয় মাস মধু সংগ্রহ করা যায় আর ছয় মাস মৌমাছিগুলোকে চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্য খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পুঁজির সংকট দেখা দেয়। এ কারণে সরকারের কাছে স্বল্প সুদে আর্থিক সহায়তা দাবি মৌ চাষিদের।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ সিরাজগঞ্জে একটা মধু প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনের। তা হলেই সম্ভব এই শিল্পকে ধরে রাখার না হলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। মধু প্রসেসিং প্লান্ট হলে উত্তরাঞ্চলের সকল মৌ চাষিরা সঠিকভাবে মৌ চাষ করে মধু সংগ্রহ করতে পারবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক মো. হাবিবুল হক জানান, এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় ৫২ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ১৫৩ জন মৌ চাষি প্রায় ১৬ হাজার মৌ বক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে ৪৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ হয়েছে। এবার ১৯৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মৌ চাষ করলে পরাগায়ন বৃদ্ধি পায় যে কারণে সরিষার আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আমরা মৌ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড