মো. জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর
ফাস্ট ক্লাস পৌরসভা হলেও থার্ডক্লাসেরও সুবিধা পাচ্ছেন না শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা পৌরসভাবাসী। এই পৌরসভা এলাকায় ঢুকলেই দেখা যায় চারদিকে নোংরা আবর্জনা ভরে রয়েছে। কোথাও নেই কোনো ডাস্টবিন। যে যার মতো ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রের ৬ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে রয়েছে সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের বাড়ি। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রবাহমাণ একটি খাল। খালটি দুই পাশে অসংখ্য খোলা টয়লেট রয়েছে। যার ফলে দিন দিন ভরাট হচ্ছে খালটি। খালের পানির রং কালো ও রক্তবর্ণ আকার ধারণ করেছে। খালের পানি এত দুর্গন্ধ যার ফলে এর পাশ দিয়ে মানুষ হাঁটতে পারছে না। ছড়াচ্ছে নানা রোগ জীবানু এবং এতে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ খালে পানি এতই বিষাক্ত যা শরীরে লাগলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
এদিকে সাংসদের বাড়ির মোড় দিয়ে বাজারে যেতে খালেরপাড় রাস্তার পাশে রয়েছে দুটি স্কুল। বাজারে পঁচা মাছসহ যাবতীয় নোংরা আর্বজনা ফেলার করণে কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মায়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে বাধ্য হয়ে অন্য জায়গায় স্কুল সরিয়ে নিয়েছে।
এই এলাকায় রয়েছে ৪ নম্বর ডামুড্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কথা হয়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, শহরের আশেপাশের সবাই এই খালে ময়লা ফেলে। ফলে ধীরে ধীরে খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর দুর্গন্ধে শিশুদের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আশেপাশের ময়লা ফেলার জন্য যদি ডাস্টবিন দিত। তাহলে আমরা সবাই সেখানে ময়লা ফেলতাম।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নেছার বলেন, ফাস্টক্লাস পৌরসভা হলেও আমরা থার্ডক্লাসেরও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। এই খালের ময়লা-আবর্জনার গন্ধে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। এখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। পচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে মানুষ ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না। আমাদের এখানে জনপ্রতিনিধি আছে। লোকাল কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ এদিকে নজর দেন না। আমরা চাই এখানে দূষণ মুক্ত করে ডাস্টবিনের ব্যাবস্থা করে দিক।
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্থানীয় ব্যবসায়ী সুজন বলেন, এই দেখেন পানির পাইপ ফেটে এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। পৌরসভায় জানালেও এক সপ্তাহের বেশি হলেও এখন কোনো খবর নেই। এরকম পনির পাইপ ফেটে রয়েছে অনেক জায়গায়। দিনের পর দিন পানি পড়ে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাসহ পরিবেশ। এছাড়াও এই খালে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে মানুষ বমি করে দেয়। কেউ দেখার নেই।
ডামুড্যা পৌরসভার বাসিন্দারা আরও জানান, শহরের পানি অপসারণের একমাত্র খালটি ময়লায় ভরে থাকার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি অপসারণে বাঁধার কারণে উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া মশা-মাছিসহ ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে চলেছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীর।
খালটি এখন ময়লা-আবর্জনায় ড্রেনে পরিণত হয়েছে (দৈনিক অধিকার)
জানা গেছে, পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং বাকি আটটি ওয়ার্ডের সঙ্গে খালটি সংযুক্ত ছিল। বর্ষার পানি এ খালের মাধ্যমে ডামুড্যার জয়ন্তী নদীতে যায়। খালটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় শহরের সকল আবর্জনা ফেলা হয় এই খালে।
প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবশালীদের দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে খালটি। ২০১৮ সালে খালটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে চালানো হয় অভিযান। কিন্তু এরপর থেকেই আর কোনো অভিযান না চালালে আবারও দখলদারদের কবলে পড়তে পারে খালটি। বর্তমানে খালটি তার নিজ বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। ক্রমান্বয়ে এটি একটি মরাখাল-এ পরিণত হতে চলেছে।
খালের পাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদাররা জানান, খালের পানি এত দুর্গন্ধ তাতে ঘরে থাকা এখন দায়। এক দিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না অন্যদিকে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়েরিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এই খালটি কর্তৃপক্ষের অব্যাবস্থাপনায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও শহরবাসীর ব্যবহার্য পানির প্রধান উৎস এই খালটি এখন ময়লা-আবর্জনায় বিষের খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন খনন না করায় ময়লা ও আবর্জনা ভরে গেছে খালটি। সেই সঙ্গে দখলের কারণে দিনদিন এর আকার ছোট হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: নড়াইলে বেটাগান ও গুলি উদ্ধার
পৌরসভার মেয়র জনাব হুমায়ুন কবির বাচ্চুর ছৈয়ালের দৈনিক অধিকারকে বলেন, সরকার একজন সুইপারকে মাসে দেয় ১২শ' টাকা। আমরা ২,৪,৫ হাজার টাকা দিয়েও রাখতে পারি না। কয়দিন কাজ করে চলে যায়। এ ব্যাপারে মেয়ররা মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছে। এতো বড় পৌরসভায় দুজন পানির লাইনে কাজ করে। একজন মাস্টার রুলে। সুইপার আছে আটজন তারা সব সময় বাজার পরিষ্কার রাখে। আমাদের ডাস্টবিন নেই। খুব শীঘ্রই সব ময়লা-আবর্জনা নদীর পাড়ে নিয়ে আগুন জালিয়ে পোড়ানো হবে।
খালের বিষয়ে বলেন, খালের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। আমাদের এখানে কিছু করার নেই।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড