পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে ওসির সামনে সন্ত্রাসীদের দিয়ে পেটানোর ঘটনায় প্রধান আসামি আরিফকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাবনা সদর থানার ওসি নাসিম আহমেদ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে আরিফকে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, তাকে ঢাকা থেকে পাবনায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মো. পাঞ্জাবের ছেলে মো. ফিরোজ তার সহযোগীরা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি বাড়িতে কৌশলে প্রবেশ করে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে ধর্ষক ফিরোজকে আটক করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজের সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে যায়। এ দিকে ধর্ষক ফিরোজকে আটকের পর ধর্ষকের বাবাসহ মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষক ফিরোজকে ছাড়িয়ে নিতে ধর্ষিতার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় চেয়ারম্যান শরিফ ধর্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে ফিরোজকে নিজ জিম্মায় নেয়। ধর্ষিতার বাবা সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের কাছে ফিরোজকে হস্তান্তর করেন। চেয়ারম্যান ধর্ষক ফিরোজকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দেন।
এ ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষিতা পরের দিন ২১ ডিসেম্বর রাতে নিজে ধর্ষকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজ ও তার সহযোগীরা ধর্ষিতাকে বেধড়ক মারপিট করে। ধর্ষিতাকে মারপিট করার আগে সন্ত্রাসীরা তাকে আবারও গণধর্ষণ করে। পরে সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতাকে মৃত ভেবে ধর্ষিতার বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ধর্ষিতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় ৯(১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন ২০০৩ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
ঐ ধর্ষণ মামলার তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আলীম নামের এক যুবককে ডেকে নেন সদর থানার ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল স্থানীয় চেয়ারম্যান শরিফের ভাই আরিফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। ওসির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথোপকথনের পরেই চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফুলের সন্ত্রাসী বাহিনী তার ওপর হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা লোহার রড দিয়ে পেটায়। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি দোকানের সিসি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় মারপিটের সময় পুলিশের ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন কনস্টেবল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঐ ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে তোলপাড় হয়।
এ ঘটনায় আহত আব্দুল আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে আরিফসহ দশ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করে।
এ দিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলীর ছোট ছেলে আরিফ। গোপালপুর গ্রামে তার বাড়ি। আরিফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। মালিগাছা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে রয়েছে তার ডাক বাংলো নামের অফিস। এক সময় এই ডাক বাংলো ছিল আরিফ বাহিনীর টর্চার সেল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাক বাংলোর সামনে জড়ো হতো শতাধিক মোটরসাইকেল। আরিফ বাহিনীর ক্যাডাররা রাতভর মাদক সেবন করত। এই ডাক বাংলোতে প্রতিপক্ষকে ডেকে এনে জোরপূর্বক সালিশের মাধ্যমে চলত অর্থ বাণিজ্য। এ বাহিনীর সাথে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সখ্যতা থাকার কারণে এলাকার কোনো মানুষ তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না।
আরও পড়ুন : বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নব্য জেএমবির ২ সদস্য আটক
এ বিষয়ে মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফ জানান, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে একটি মহল তাকে হেয় করতে অহেতুক নানা সময়ে নানা অভিযোগ করছে। গত শুক্রবার যে সময় ঘটনা ঘটে সে সময় আমার ভাই আরিফ ঢাকায় ছিল।
ওডি/জেএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড