সালমান সাঁকো
বেপরোয়া এবং উচ্ছৃঙ্খল গাড়ি চালকদের শাস্তিসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে পুরো ঢাকার পরিবহনের চিত্র বদলাতে শুরু করলেও বদলায়নি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মহাসড়কের বেহাল অবস্থা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এই সকল দুর্ঘটনার পিছনে উচ্ছৃঙ্খল গাড়ি চালকরা যতটুকু দায়ি ঠিক ততটুকু দায়ি কিছু অনিরাপদ যানবাহন। এই সকল অনিরাপদ যানবাহনের তালিকায় প্রথমে রয়েছে নছিমন-করিমনসহ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। আর এই অবৈধ যানবাহন গুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মহাসড়ক।
অবৈধ এসব যানবাহনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পরিবহনের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের হিসাবমতে, নছিমন-করিমনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ বছরে তিন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
নছিমন-করিমনগুলোর দুর্ঘটনার জন্য নির্মাণজনিত ত্রুটি ও চালকদের অদক্ষতা মূলত দায়ী। চালকদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাদের লাইসেন্স থাকা তো দূরের কথা, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। এ কারণে এসব আনাড়ি চালক নিজেরা যেমন দুর্ঘটনায় পড়ছে, তেমনি মহাসড়কের অন্য যানবাহনগুলোকেও দুর্ঘটনায় পড়তে বাধ্য করছে। স্থানীয় ওয়ার্কশপে তৈরি বলে নছিমন-করিমনের ব্রেক, স্টিয়ারিং থেকে শুরু করে সবকিছুই দুর্বল। এগুলোর দৈহিক কাঠামোও ত্রুটিযুক্ত। এর ওপর এগুলোয় ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ও মালামাল বহন করা হয়।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার মহাসড়ক থেকে নছিমন-করিমনসহ ইঞ্জিনচালিত ভটভটি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাবনা জেলা এই নির্দেশের আওতামুক্ত হওয়ায় মহাসড়কজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ নছিমন-করিমনসহ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা।
পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের মতে, পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মতো এত বেশি নছিমন-করিমন খুব কম এলাকায় দেখা যায়। এই দুই উপজেলায় চলাচলকারী নছিমন-করিমনের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি।
অন্যদিকে খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের মাগুরা অংশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নসিমন, করিমন আলমসাধু ও ভটভটি নামের শ্যালো ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানবাহন।
মহাসড়কে ‘মরণফাঁদ’ এই বাহন চলাচল নিষিদ্ধে আইন থাকলেও কেউ মানছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে এর সংখ্যা, বাড়ছে দুর্ঘটনা।
খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের মাগুরা অংশে সীমাখালী থেকে রামনগর ও জেলার চারটি উপজেলা শহর এবং গ্রামগঞ্জের সড়ক রাস্তা ওলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত প্রায় ৩ হাজার নসিমন-করিমন-আলমসাধু। এসব বাহনের দ্বারা সংঘটিত দুর্ঘটনায় প্রতিমাসে হতাহত হচ্ছে মানুষ। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে।
শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় প্রায় অর্ধশতাধিক নসিমন-করিমন ও আলমসাধু তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। গড়ে এসব কারখানায় প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০টি অবৈধ বাহন। নির্দেশ সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হচ্ছে না কারখানা। তবে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলা থেকে বেশি আসছে এসব যানবাহন।
বিভিন্ন গতির এসব যানবাহনের চালক শিশু ও অজ্ঞ ব্যক্তিরা। তারা বেশি জোরে চালালেই এই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারায়। পণ্য ও যাত্রি পরিবহণে খরচ কম হওয়ায় সাধারণ লোকজনও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করছে এসব পরিবহণ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড