• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সাগর কলায় স্বাবলম্বী নরসিংদীর কৃষক

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:১৭
সাগর কলা বাগান
নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা বাগান (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী অমৃত সাগর কলার মোঘল আমল থেকেই দেশজুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে। অন্যান্য কলার চেয়ে সুগন্ধি ও সুস্বাদু হওয়ায় প্রাচীন কাল থেকেই দেশের সর্বত্র নরসিংদীর সাগর কলার চাহিদা রয়েছে। এখানকার মাটি বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে কলা উৎপাদন হয়। ফলে নরসিংদীর সাগর কলা স্থানীয় ও দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

এখানকার সাগর কলা স্বাদ, গন্ধ, রং ও আকারে সুন্দর হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই ঢাকার নবাবদের খাদ্য তালিকায় এর অন্তর্ভুক্তিসহ তাদের রাষ্ট্রীয় অতিথিদের নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। নরসিংদীর জলবায়ু সাগর কলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এখানে শত শত বছর ধরে সাগর কলা চাষ হয়ে আসছে।

সাগর কলা চাষের মাধ্যমে অনেকেই তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে। তাই দিন দিন সাগর কলা চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে চলেছে।

চরনগরদীর সাগর কলা চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে সাগর কলার চাষ করেছি। এতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এখান থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা মুনাফা হতে পারে। এখানকার সাগর কলার ফলন ভালো হওয়ায় কলাচাষ করে তার পাশাপাশি অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভাটপাড়ার আবুল হোসেন বলেন, সাগর কলার পাশাপাশি এ বছর তিনি সবরি কলারও চাষ করেছিলেন। কিন্তু সবরি কলার ফলন ভালো না হওয়ায় একটি বাগান দিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে পাশাপাশি সাগর কলার ফলন ভালো হওয়ায় তা দিয়ে কোনো রকম ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আসমান্দির চরের ক্ষুদে কলাচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, পৈতৃক চাষাবাদের সুবাদেই তিনি কলাচাষ শিখেছেন। বর্তমানে তিনি দুই বিঘা জমিতে সাগর কলার চাষ করেছেন। যা থেকে প্রতি বছর খরচ বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা মুনাফা করেন তিনি। কলাচাষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা স্বচ্ছলতার সহিত জীবন-যাপন করছেন বলেও জানান তিনি।

শিলমান্দি ইউনিয়নের মোখলেছুর রহমান বলেন, লেখা-পড়া শেষ হওয়ার পর চাকরির পেছনে সময় নষ্ট না করে তিনি তার পৈতৃক আবাদী জমিতে সাগর কলার চাষাবাদ শুরু করেন। তিনি এ বছর চার বিঘা জমিতে সাগর কলার চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০টি কলার চারা রোপণ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণে ২০-৩০টি চারা নষ্ট হয়ে গেলেও প্রতি বিঘায় গড়ে তিনশ কলার কাঁদি পড়েছে। প্রতিটি কাঁদি পাইকারি বাজার মূল্য ৬শ থেকে ৭শ টাকা। সেই হিসেবে এ বছর তিনি ৭-৮ লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।

বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক ঝড় ছাড়া কলাচাষিদের খুব একটা ক্ষতি হয় না বলে কলা চাষে ঝুঁকি কম। তাই দিনদিন নরসিংদীতে কলাচাষি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ও জানান তিনি।

কলার চারা রোপণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোখলেছুর রহমান বলেন, সারা বছরই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা উত্তম। প্রথম মৌসুম মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ। দ্বিতীয় মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে। তৃতীয় মৌসুম মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর। সাত-আটবার চাষ দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হয়। তারপর জৈবসার বিঘা প্রতি চার টন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। অতপর ২–২ মিটার দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে।

প্রতিটি গর্তে ছয় কেজি গোবর, ৫শ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১শ গ্রাম এমপি, ১শ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে নির্ধারিত জাতের সতেজ চারা রোপণ করতে হবে। শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচের প্রয়োজন হয়। ভালো ফলন পেতে হলে গাছ রোপণের প্রথম অবস্থায় ৫ মাস পর্যন্ত বাগান আগাছামুক্ত রাখা জরুরি বলে ও জানান তিনি।

নরসিংদী জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক শোভন কুমার ধর বলেন, দেশ বিখ্যাত নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা একসময় নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রচুর পরিমাণে চাষ হতো কিন্তু বর্তমানে সাগর কলা চাষে নরসিংদী সদরের শিলমান্দি, আসমান্দির চর, শেখেরচর, পাঁচদোনা, মেহেরপাড়া, ভাটপাড়া, ভেলানগর, কামারচর, কারারচর, মাহমুদপুর ও দক্ষিণ কংসাদী এলাকা সাগর কলা চাষে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে নরসিংদী সদরেই প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয় বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: নাটোরে নৈশপ্রহরীকে বেঁধে রেখে চার দোকানে ডাকাতি

নরসিংদী সদর কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, লোকসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের ফলে কলাচাষে এক সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে অনেকেই কলাচাষ করে স্বাবলম্বী। দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদীতে সাগর কলা চাষ হয়ে আসছে। কলাগাছের পোকা-মাকড় দমন ও রোগ-বালাই নিরাময়ে কৃষকরা সাধারণত ডিএটি বা ড্যাব সার ব্যবহার করে থাকে যা কলা গাছের রোগ-বালাই নিরাময়ে তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। তাই আমরা এখানকার কলাক্ষেতের মাটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষা করে এর প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছি। সেই সঙ্গে কলার চারা ও কলা উৎপাদনে রাসায়নিক ওষুধের পরিবর্তে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড