• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অপরিকল্পিত বালুমহাল, হুমকিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী

  রাজু আহমেদ

  রাজশাহী

২০ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৫০
রাজশাহী
অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

রাজশাহীর পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা বাঁধ ধ্বংসের পথে। পাশাপাশি পদ্মার তীরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আজ হুমকির মুখে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে জানান, ১১টি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন হাজারো বালু ভর্তি ভারি ট্রাক বালুমহাল সংলগ্ন রাস্তার উপর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতের ফলে রাস্তাগুলো ভেঙে পড়েছে। এতে সেই রাস্তা ব্যবহারকারী এলাকাবাসীকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই রাস্তাগুলো নির্মাণে প্রায় ছয় থেকে সাত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। স্থানীয় শতাধিক প্রভাবশালীমহল এই বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রাস্তাগুলো ভেঙে পড়ায় জনদুর্ভোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজশাহী শহর ঘেঁষে ১৭ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। যা নির্মাণে খরচ হয়েছে হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি নগরীর পশ্চিম প্রান্তের বুলনপুর-সোনাইকান্দি এলাকার নদী তীরবর্তী চার কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করা হয়। যাতে খরচ হয় ২৬৬ কোটি টাকা। তবে বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় সেই বাঁধ নষ্ট হচ্ছে। একই কারণে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ নিয়ে পূর্ব সতর্কতা স্বরূপ স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

রাজশাহী নগরীসহ গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট, বাঘা উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর মোট ১১টি পৃথক পয়েন্ট বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, রাজশাহী জেলা প্রশাসন নদীর পয়েন্টগুলো ইজারা দিয়ে সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় করেছেন ২৫ কোটির টাকা। তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে চায়নি জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। প্রতি বছর বাংলার বৈশাখ মাসের প্রথম তারিখে এক বছরের জন্য এই স্থানগুলো বালু উত্তোলনের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়া হয়।

নিরাপত্তার কারণে নদীর বাঁধের দুই কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা নিষিদ্ধ থাকলেও একটি মহল সেই নিষিদ্ধ সীমানার মধ্যেই বালু তুলছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে ১৪ জানুয়ারি পদ্মা তীরবর্তী বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন পশ্চিমের হরিপুর ও নবগঙ্গা মৌজার দুইজন বালুর ঘাট ইজারাদার রজব আলী ও আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকালে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হায়াত এই দুই বালুমহালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এর আগে গত বছর কাজলা মৌজা থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগে ওই বালু ঘাটের ইজারাদার আজিজুল আলম বেন্টুর কাছ থেকেও জরিমানা আদায় করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। এছাড়া নদীর প্রবাহ রোধ করে বালু নিয়ে পরিবহন যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরির বিষয়টিও সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে।

রাজশাহী নগরী ও এর আশপাশে নদী তীরবর্তী বালুমহালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নিয়ম অমান্য করে প্রকাশ্যে নদী তীরবর্তী বাঁধের কোল ঘেঁষে পদ্মা থেকে বালু তোলা হচ্ছে। কোনো কোনো বালুমহাল সংশ্লিষ্টরা সেই বালু তুলে সংরক্ষণ করছেন বাঁধের ওপর। এখানেই শেষ নয়; শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুকে খালের মতো সৃষ্ট জলাধার দিয়ে যে সামান্য পানি প্রবাহিত হচ্ছে, শেষ সম্বল সেই প্রবাহিত পানিটুকুও বন্ধ করে ইট-খোয়া ফেলে নদীর মাঝে রাস্তা তৈরি করে ট্রাক নামিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

নদী বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য মতে, বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল প্রতিরোধের জন্য পদ্মার বুকে আই আকৃতির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে করে এই বাঁধগুলোর পশ্চিম পাড়ে পলিমাটি বা বালি জমে। এই পলিমাটি বা বালি খরস্রোতা নদীর স্রোতের তীব্রতা থেকে তীরবর্তী এলাকাকে রক্ষা করবে এবং নদীর তীব্র স্রোত তীরের দিক থেকে মাঝ নদীর দিকে সরিয়ে দেবে। অথচ তীর রক্ষার পরিকল্পিত সেই বালুই তুলে ফেলা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বাঁধের উপর বালুর পাহাড় গড়ে তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সেই বালু থেকে দিন-রাত পানি ঝরছে। ফলে বাঁধ এলাকার মাটি ও সংস্কার করা বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন : অপহরণের পর শিকলে বেঁধে নির্যাতন, আওয়ামী লীগ নেতা আটক

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান জানান, শহর অংশের নদী থেকে বালু না তোলার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড