• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দিনাজপুরে লাকি হত্যাকাণ্ড, ৮ দিনেও কূলকিনারা পায়নি পুলিশ

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারি ২০২০, ২২:৪৭
নিহত
নিহত লাকি আক্তার (ছবি : দৈনিক অধিকার)

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় লাকি আক্তার (২৪) হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আট দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক বা বাদী কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না- কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত লাকির স্বামীর পরিবার থেকে বলা হচ্ছে, সে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আর তার বাবার পরিবারের দাবি- নির্যাতনের পর বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে লাকি আক্তারকে। তবে এমন অভিযোগ থাকলেও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, বিষের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে ঘটনার দিন থেকেই নিহতের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ পলাতক রয়েছেন। পাশাপাশি খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না লাকি আক্তারের তিন বছরের শিশু কন্যা ফারিয়া আক্তারের।

নিহত লাকি আক্তার উপজেলার ১০ নম্বর মোহনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. আব্দুল আজিজের মেয়ে।

জানা যায়, ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৯ টাকা দেনমোহরে বীরগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাহানপুর গ্রামের মো. মাজেদুর রহমানের ছেলে মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে বিয়ে হয় লাকি আক্তারের। বিয়ের সময় ছেলে পক্ষকে যৌতুক বাবদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন লাকির বাবা আব্দুল আজিজ। কিন্তু ওমর ফারুক তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। প্রায় সময় যৌতুকের জন্য লাকিকে নির্যাতন করতেন তিনি।

এরই মধ্যে তাদের সংসারে প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তান ফারিয়ার জন্ম হয়। এতে লাকির ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এমনকি বিয়ের সময়ে লাকিকে তার বাবা-মায়ের দেওয়া ২ ভরি স্বর্ণালঙ্কারও বিক্রি করে দেয় স্বামী ওমর ফারুক। সেই টাকা শেষ হলে যৌতুকের জন্য আবারও লাকিকে নির্যাতন শুরু করে তার স্বামী ওমর ফারুকসহ শ্বশুর মাজেদুর রহমান, শাশুড়ি মোছা. ফরিদা বেগম ও ননদ মোছা. মৌসুমি বেগম।

এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে লাকি সন্তান ফারিয়াকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সালিশে তাদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় ওমর ফারুক শিশু ফারিয়াকে নিয়ে যায়। পরে সন্তানের মায়া আর স্বামীর অনুরোধে পুনরায় বিয়ে করে ওমর ফারুকের সংসারে ফিরে আসে লাকি। এরপর বিচ্ছেদের সময় দেওয়া টাকা বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য আবারও তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরে বাধ্য হয়ে লাকির বাবা-মা দুই দফায় ৮০ হাজার টাকা ওমর ফারুকের হাতে তুলে দেন।

এতেও লাকির ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বরং তার স্বামীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা আরও ৫ লাখ টাকা তার বাবার বাড়ি থেকে আনতে লাকিকে চাপ দেয়। এরপর থেকে প্রায়ই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বাঁশের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে লাকিকে নির্যাতন করা হত। একইভাবে গত ১২ জানুয়ারিতেও লাকির হাত-পা বেঁধে তার ওপর নির্যাতন করা হয়।

একপর্যায় লাকি আক্তার টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে তার বাবাকে ফোনে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে। তা না হলে তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ তাকে মেরে ফেলবে বলেও মুঠোফোনে জানায় সে।

লাকির পরিবারের অভিযোগ- পালিয়ে যাওয়ার পর লাকিকে ধরে নিয়ে গিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার শ্বশুড়বাড়ি থেকে প্রচার করা হয় লাকি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে মৃত লাশ মাইক্রোবাসে করে নিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ করেন তারা।

যদিও লাকির স্বামীর পরিবারের দাবি- বিষপানের পর প্রথমে লাকি আক্তারকে বীরগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানেই মারা যায় লাকি আক্তার।

কিন্তু দুই হাসপাতালের রেকর্ডে কোথাও লাকি আক্তারকে ভর্তি কিংবা চিকিৎসার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া পুলিশ তার লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।

পরে এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। যেখানে বাদী উল্লেখ করেছেন, যৌতুকের জন্য মারধরের পর বিষপান করিয়ে লাকিকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাহানপুর গ্রামের স্বামী ওমর ফারুকের বাড়িতে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে ওমর ফারুকের দাদি সখিনা খাতুন (৬৫) জানান, ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছে। কিন্তু কোথায় রয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি। এ সময় তিনিও দাবি করেন, লাকি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।

এমনকি মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোপাল দেব শর্মাও জানান, লাকি আক্তার বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। তবে ভিন্ন কথা বলছেন প্রতিবেশীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, লাকি আক্তারকে প্রায়েই নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পরই তাকে শ্বাসরোধ হত্যা করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন : গলায়, বুকে ও পিঠে ছোরা চালাতেই লুটিয়ে পড়ে রহিম

এ দিকে, লাকির বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘হত্যা মামলার বাদী হয়েছে মেয়ের মামা মো. বুলবুল ইসলাম। আমার মেয়েকে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।’

অন্যদিকে ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, তিনি যে আলামত সংগ্রহ করেছেন তার পর্যবেক্ষণে বিষের কোনো আলামত পাননি। লাকিকে অন্য কোনো উপায়ে হত্যা করা হতে পারে। এ সময় ভিসারা রিপোর্টের জন্য সংগ্রহকৃত নমুনা ঢাকার মহাখালীতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ থানার ওসি সাকিলা পারভিন দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘আমরা হত্যা মামলা গ্রহণ করেছি। আসামিরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। কীভাবে লাকিকে হত্যা করা হয়েছে বর্তমানে তার তদন্ত চলছে।’

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড