সারাদেশ ডেস্ক
৪৮ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পেয়েছেন সন্তানরা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের বিয়ানীবাজারে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। হারিয়ে যাওয়া সেই হাবিবুর রহমানকে ঘিরে সন্তান-সন্ততি ও নাতি-নাতনিদের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। আর তা সম্ভব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে। এখন সিলেট নগরের অভিজাত হাসপাতাল আল হারামাইনে সন্তানদের ভালোবাসায় রয়েছেন এ বৃদ্ধ।
হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, বাবা হারিয়ে যাওয়ার সময় আমরা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে থাকতাম। এখন বাড়ি বিয়ানীবাজার পৌরসভার কবসায়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী বছরে বাবা ব্যবসার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। স্বজনরাও তাকে খুঁজেছেন। কিন্তু কোথাও তার হদিস মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, বাবার স্মৃতি লালন করেই মা মারা গেছেন ২০০০ সালে। বাবাকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্তানদের তাদের দাদা হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি শুনিয়েছি।
হারিয়ে যাওয়ার সময় ৪০ দিনের রেখে যাওয়া ছোট ছেলের সংসারেও হাবিবুর রহমানের দুই নাতি। বড়, মেজ ছেলেদের ঘরেও নাতি-নাতনি রয়েছে। নাতি-নাতনি ও নাতবৌরাও দাদা হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি শুনেছেন।
হাবিবুর রহমানের নাতবৌ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে দাদা শ্বশুরকে নিয়ে শোনা গল্পের কথা মনে করেন এবং ভিডিওচিত্রটি শ্বশুরসহ পরিবারের সদস্যদের দেখান। এরপর তারা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে হাবিবুর রহমানকে শনাক্ত করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মৌলভীবাজারের হযরত শাহব উদ্দিনের মাজারে থাকতেন হাবিবুর রহমান। সেই মাজারেই পরিচয় জেলার রায়শ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগমের। মাজার ভক্ত রাজিয়া সেই থেকেই হাবিবুর রহমানের সেবা ও দেখাশুনা করে আসছিলেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন মাজারে ঘুমাতেন। গত এক যুগ থেকে বিছানায় পড়েছিলেন তিনি। মাসখানেক আগে খাট থেকে পড়ে তার ডান হাত ভেঙে গেলে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন রাজিয়া। কয়েক দিন আগে ভাঙা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিন আগে ভাঙা হাতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অর্থ ও ওষুধ পথ্যের যোগান না থাকায় অস্ত্রোপচার হয়নি। ঘটনাটি হাবিবুর রহমান পাশের শয্যার একজনকে শেয়ার করেন। ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। এ ভিডিও দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউ। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের দেখালে পরিবারের সদস্য অনুমান করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান। তবে হাবিবুর রহমান শুধু স্ত্রী জয়গুন নেছার নাম বলতে পারেন।
আরও পড়ুন : ‘ইত্যাদি’ দেখে বাড়ি ফেরা হলো না মোটরসাইকেল আরোহীর
পরিবারের সদস্যরা তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। এখন সন্তান ও নাতিপুতিরা তাকে ঘিরে আছেন হাসপাতালে। হাবিবুর রহমানকে ফিরে পাওয়ায় পরিবারটিতে যেন আরেক ‘নবজাতকের’ আবির্ভাব হয়েছে। আর তাকে ঘিরেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে আনন্দ উৎসব।
ওডি/জেএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড