চুরির অপবাদে কিশোরকে উল্টো করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন

চুরির অপবাদে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এক কিশোরকে উল্টো করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গরু চুরির অভিযোগে ঘুমন্ত কিশোর রাফিকুলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শতশত মানুষের সামনে অমানবিক নির্যাতন করা হয়।

শনিবার সকালে সুন্দরগঞ্জের ধুমাইটারী গ্রামে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার সেই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও চিত্রটি অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে পেয়ে তা ছড়িয়ে দেয় নির্যাতনের শিকার রাফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) নির্যাতনের ভিডিও চিত্রের বিষয়টি নজরে আসে গণমাধ্যমকর্মীদের।

নির্যাতনের শিকার কিশোর রাফিকুল বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সুন্দরগঞ্জের ধুমাইটারী গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ১৩ বছরের কিশোর রাফিকুল স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করত।

নির্যাতিত কিশোরের স্বজনদের অভিযোগ, প্রতিবেশী ফজলু, ইয়াজল ও নাজমুলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলছে তাদের। গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে ঘুম থেকে রাফিকুলকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। পরে তারা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করলে তাৎক্ষণিক তিন হাজার টাকা দেয় পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে রাতভর আটক রেখে রাফিকুলকে মারধর করা হয়।

পরের দিন শনিবার সকালে গ্রামের শত শত নারী-পুরুষের সামনে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাফিকুলকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে ফজলু, ইয়াজল ও নামজুল।

রাফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সকলের সামনে রাফিকুলের ওপর নির্মম নির্যাতন চালালেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। নির্যাতনের শিকার রাফিকুল এক পর্যায়ে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর নির্যাতনকারী ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ায় তারা অভিযোগ করতে সাহস পাননি। মোবাইলে ধারণ করা অজ্ঞাত একজনের নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও দেখে বিষয়টি পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান তিনি।

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. বিশ্বেশ্বর চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘মারধরের শিকার কিশোরের দুই পা-হাত ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’

এ দিকে, ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভিডিও দেখে ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে নির্যাতনের শিকার রাফিকুলের ভাই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

ওডি/ এফইউ