• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১৬ বছর শিকলবন্দি মুসলিমা আক্তার!

  শাকিল মুরাদ, শেরপুর

১১ জানুয়ারি ২০২০, ২৩:১১
শিকলবন্দি
শিকলবন্দি মুসলিমা আক্তার (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ছোট্ট একটি টিনের চালাঘর। ভেতরের চার কোণায় চারটি খুঁটিতে লাগানো আছে শিকল, শেষ অংশে ঝুলছে চারটি তালা। হাত ও পায়ের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে সেই শিকল। এতে শরীরেও বসে গেছে শিকলের দাগ। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক যতক্ষণ না নিজ কর্মস্থল থেকে মা ফিরছেন ততক্ষণ এভাবেই ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে হয় তাকে। চিৎকার-চেঁচামেচি করলেও দেখতে আসে না কেউ!

বলছি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ১৮ বছর বয়সী যুবতী মুসলিমা আক্তারের কথা। উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের গুজাকুড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের মেয়ে মুসলিমা এভাবেই শিকলবন্দি রয়েছে ১৬ বছর! রোদ-বৃষ্টি-ঝড় যাই হোক তার নিত্যদিনের সঙ্গী হাতে-পায়ে বাঁধা এই শিকল।

মুসলিমার মা মনোয়ারা বেগম জানান, তার মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী। নিজেই নিজের হাত-পা কামড়ে চামড়া তুলে নেয়। শরীর থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলে। আবার সুযোগ পেলেই দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি কয়েকবার পানিতেও পড়ে গিয়েছিল সে। এ কারণে ঘরের ভেতরে এভাবে শিকলবন্দি রাখতে হয় তাকে।

তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে মেয়েকে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিতে পারিনি। স্থানীয় বিভিন্ন কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করাইছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এভাবেই মেয়েকে ১৬ বছর ধইরা টানতাছি।’

এভাবেই সারা দিন শিকলবন্দি থাকতে হয় মুসলিমা আক্তারকে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরিষা তৈল, বাদাম, চানাচুর, পানের পাতাসহ বেশকিছু পণ্য ফেরি করে বিক্রি করেন মনোয়ারা বেগম। আর তা দিয়েই সংসার চালান তিনি। মনোয়ারার নিজের নামে ৪ শতাংশ বসতভিটা রয়েছে। ছেলেদের সহযোগিতায় কয়েকটি টিন দিয়ে মনোয়ারা ছোট একটি একচালা ঘর তুলেছেন। তবে বড় ছেলে মাঝে মধ্যেই রিকশা চালাতে পরিবার নিয়ে রাজধানীতে চলে যায়। সে সময় ফাঁকা ঘরে মা-মেয়ে একা থাকে। ফলে জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলে গেলে মেয়েকে ঘরের মেঝেতে শিকলবন্দি রেখেই যেতে হয় তাকে।

মুসলিমার বড় ভাই মুসলিম উদ্দিন জানান, তারা তিন ভাই ও এক বোন। তার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মুসলিমার বয়স যখন দুই বছর তখনই তার বাবা মারা যায়। এরপর থেকে তার মা চার সন্তান নিয়ে সংসারের বোঝা মাথায় তুলে নেন। বাজার থেকে তেল কিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করে সংসারের খরচ চালান।

মুসলিমার আরেক ভাই মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমার ছোট বোনের এই অসুখ। আমরা গরিব মানুষ। অনেক ছোটখাটো কবিরাজ, ডাক্তার দেখানো হয়েছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন জটিল অবস্থা আমার বোনের। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো আমার বোনটা সুস্থ হয়ে উঠবে।’

এ দিকে, প্রতিবেশী নাছিমা আক্তার, উমেছা খাতুন, জুয়েল, হানিসহ অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটার এমন সমস্যা। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখছে তার মা। এখন মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠবে। কারণ তাদের কাছে চিকিৎসা করার মতো টাকা নেই। যদি সরকার এই মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাহলে হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি আমি ওই মেয়েটিকে দেখে এসেছি। সে সময় মেয়েটির পরিবারের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকাও দিয়েছি। পাশাপাশি তার ভাইয়ের চালানোর জন্য একটি ভ্যানগাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা মুসলিমা আক্তারের দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ তাদের থাকার জন্য একটি ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করব।’

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড