• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যশোরের যশ খেজুরের রস 

  গোলাম মোস্তফা মুন্না, যশোর

১১ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:১২
যশোর
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছি (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রাচীন বাংলায় যশোর খেজুর গাছ ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। যশোরের খেজুরের রসের দীর্ঘকালীন ইতিহাসও রয়েছে। প্রতিবছর যশোরে শীতকালে ৫২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৫ কেজি গুড় উৎপন্ন হয়। ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৫টি খেজুর গাছ থেকে ৪১ কোটি ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬০০ ভাড় রস উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৫০টি খেজুর গাছ আছে। খেজুর চারা রোপণের ৫ বছরের পর রস উৎপন্নের জন্য কাটা শুরু হয়। ১৫/২০ বছর পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। গাছির অভাবে এবং ছোট থাকায় ১২ লাখ ৯১ হাজার ২০০ গাছ থেকে রস উৎপন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলায় পেশাদার হিসেবে মাত্র ৪ হাজার ৩৯১ চাষি রয়েছেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করে থাকেন। বছরের অন্য সময় তারা অন্যান্য পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ১০ বছর আগে গাছির সংখ্যা ১০ গুণ বেশি ছিল বলে বনবিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দিন দিন গাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং আর রস জ্বালানোর জন্য জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে। খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে বিভিন্ন ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৯৯০ সাল থেকে প্রতি বছর সরকারিভাবে খেজুরের চারা লাগিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ খেজুরের চারা লাগানো হয়েছে। সব চারা বেঁচে না থাকলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছ বেঁচে আছে। এসব গাছ থেকে দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুভাষ বিশ্বাস।

মণিরামপুর উপজেলার কপালিয়া গ্রামের গাছি সাত্তার জানান, শীতে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ কাটেন গাছিরা। যশোর এলাকায় দক্ষ গাছির কদর বরাবরই বেশি।

বনবিভাগ থেকে জানা গেছে, যশোরের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই খেজুর গাছ এমনিতেই জন্মে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান। এখন শীতকাল তাই অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের কদর বেড়ে উঠেছে। কারণ এ গাছ এখন দিচ্ছে গাঢ় মিষ্টি রস। আর এ রস জ্বালিয়ে পাতলা-ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে এক সময় চিনিও তৈরি করা হতো।

তবে, অসাধু গাছি এবং ব্যবসায়ীরা রসের সাথে চিনি মিশিয়ে পাটালি তৈরি করছে। যার কারণে কাঙ্ক্ষিত পাটালি পাচ্ছে না। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় খাঁটি গুড় তৈরি করার জন্য প্রায় ৬০ জন গাছিকে শপথ করান যশোরের জেলা প্রশাসক আশরাফ হোসেন।

আরও পড়ুন : খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যা

ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোর-খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯০০-১৯০১ সালে পূর্ববঙ্গে খেজুরের গুড় তৈরি হয়েছে ২১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ মণ। এর মধ্যে শুধু যশোরেই তৈরি হয়েছে ১৭ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ মণ গুড়। ১৮৬১ সালে চৌগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের পাশে তাহিরপুরে প্রথম খেজুরের গুড় উৎপাদনের কারখানা গড়ে ওঠে। প্রায় এক টানা ২০ বছর চালু থাকার পর বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৮৪ সালে পুনরায় কারখানাটি চালু করেন এ্যামেট অ্যান্ড চেম্বার কোম্পানি। ১৯১০ সাল পর্যন্ত চলে খেজুর গুড়ের চিনি উৎপাদন কারখানাটি। ওই সময়কালে চিনির জন্য দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন বণিক দল ছুটে আসত তাহেরপুরে। বড় বড় জাহাজও ভিড়ত খেজুরের চিনির সন্ধানে। কলকাতার বন্দরের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ গুড়, পাটালি ও রস রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে কারখানাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মাটি দিয়ে ঢাকা রয়েছে।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড