• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সমস্যায় জর্জরিত দোহাজারী ৩১ শয্যা হাসপাতাল 

  মো. কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ চট্টগ্রাম

০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:০২
দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল
দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এখন নিজেই রোগী। এতে দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

১৯৬৫ সালে ১০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দোহাজারী হাসপাতালটি। পরে চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৯০ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরেও প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের বিভিন্নস্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এ অবস্থায় যে কোনো মুহূর্তে ভবনের বিশাল অংশ খসে পড়ে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাসপাতালটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতল ভবনটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ভবনের অনেকাংশে খসে পড়েছে ছাদের অংশ। উত্তর পাশে ছাদের বিশাল আকারের একটি অংশ খসে পড়ে রড বেরিয়ে পড়েছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। টয়লেটের পাইপ ফেটে ময়লা-আবর্জনা বেরিয়ে সয়লাব হয়ে গেছে ভবনের চারপাশ। এ অবস্থায় দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দরজা জানালারও ভগ্নদশা।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় মল-মূত্রের দুর্গন্ধে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের সারাক্ষণ নাক চেপে থাকতে হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো থাকে না অনেক সময় বাল্ব ফিউজ থাকায়, বাল্ব পরিবর্তনেও হয় গড়িমসি করা হয়। জানালাগুলোর কোনোটিতে গ্রিল একটিও নেই। এ অবস্থায় জালনা বন্ধ করার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা তাদের সঙ্গে থাকা পরিধেয় বস্ত্র অথবা খালি কার্টন দিয়ে বাতাস প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করেন।

দোহাজারী হাসপাতালটি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হলেও প্রায় সময় রোগী ভর্তি থাকেন এর দ্বিগুণ। করিডরে আলাদা বেডের ব্যবস্থা করে অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। অনেক সময় ফ্লোরের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা সেবা নেন অনেক রোগী এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।

দোহাজারী পৌরসভার পাশবর্তী ইউনিয়ন ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া, পুরানগড়, কালিয়াইশ, আমিলাইষ ও খাগরিয়ার মধ্যবর্তীস্থানে হওয়ায় দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। এসব ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হিমশিম পোহাতে হয়। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মহাসড়কে কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে ট্রমা সেন্টার না থাকায় আহত রোগীদের ঠাঁই হয় দোহাজারী হাসপাতালে।

এ দিকে, প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দ্বারা রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন সাতজন চিকিৎসক। ১৩ জন নার্সের স্থলে কর্মরত আছেন ৯ জন। চারজনের স্থলে ওয়ার্ড বয় রয়েছেন দুজন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন দুজন। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে দুজন ওয়ার্ড বয় এবং দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরও দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দরকার বলে জানান চিকিৎসকেরা।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার ও কম্পিউটার অপারটরের পদ থাকলেও তা শূন্যই রয়ে গেছে। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালানো হচ্ছে কর্মকাণ্ড। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি পুরাতন হওয়ায় তেমন ব্যবহার হয় না।

এ ব্যাপারে দোহাজারী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তৈয়্যব বলেন, সম্প্রতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় উত্তর পাশে ছাদের একটি অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী পদটি খালি থাকায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অনেক পদ খালি রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে অনেক কাজ। শূন্য পদগুলোর ব্যাপারে চাহিদাপত্র ইতোমধ্যে মন্ত্রীপরিষদে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহীন হাসান চৌধুরীর বলেন, আমি কিছুদিন আগে এ পদে যোগদান করেছি। এই সমস্যাগুলো অনেক আগের। আমার আগে যারা এ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। যেহেতু আমার এলাকারই প্রতিষ্ঠান আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করব সমস্যাগুলো সমাধানের।

আরও পড়ুন: তিন দিন আগে সে হোটেলের মালিকের কাছে ছুটি নিয়ে

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক অধিকারকে বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। দোহাজারী, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী হাসপাতালে অচিরেই সংস্কার কাজ শুরু হবে। স্থাপনাগুলোতে যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন আমরা এ বছর সংস্কারকাজ করতে পারব।

জনবল সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে জনবল সংকট সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড