আল মামুন জীবন, ঠাকুরগাঁও
পাঁচ বছর আগেও বাঁশের দাম বেশ কম ছিল। তখন ৫শ টাকার বাঁশ কিনে তাতে চাটাই, খাঁচা, বিটে, পলো, আন্টা, কুলা, পাখা, ডালি, ভাড়, ঝাড়ু, হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ নানা পণ্য তৈরি করে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করা যেত। কোনো কোনো সময় তার দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই! ফলে পৈতৃক পেশায় টিকে থাকতে ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশমালি (বাঁশের পণ্যের কারিগরদের) রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
বাঁশের দাম বাড়ার কারণে এখন ৫শ টাকার বাঁশ কিনে সেই বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরির পর ১ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। এতে দুজনকে সারাদিন পরিশ্রম করতে হয়। ফলে মজুরির টাকা বের করাই সম্ভব হয় না। কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী গ্রামের গোলাপ রায়। তিনি ওই গ্রামের বাঁশমালি।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোলাপ রায়ের স্ত্রী দিপ্তী রাণী বাড়ির পাশে রাস্তায় হালকা দা দিয়ে বাঁশ কেটে বাতা (চটা) তৈরি করছেন। সেই বাতাগুলো দিয়ে তার স্বামী হাঁস-মুরগি রাখার খাঁচাসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি করছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করছে তাদের দুই সন্তান।
দিপ্তি রানী জানান, কৃষি কাজের পাশাপাশি বাঁশের তৈরি জিনিস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে ওই এলাকার ৫০টি পরিবার। আমন ধান, আলু তোলার মৌসুমসহ বিভিন্ন ফসলাদি উত্তোলনের সময়গুলোতে ডালি, কুলা, ঝাড়ুসহ বিভিন্ন বাঁশের পণ্যের চাহিদা থাকে। তাই কৃষি কাজ দ্রুত শেষ করে তারা সপরিবারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাঁশের কাজে। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি সন্তানদের এ কাজে সহযোগিতা করতে হয়।
গোলাপ রায় জানান, বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করেই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছি। ছেলে এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে পড়ছে। ইচ্ছা পড়ালেখা শেষ করে একটা চাকরি পাবে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে পাওয়া এ পেশা থেকে আমাদের মুক্তি দেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব পুরুষদের কাছে পাওয়া বংশ পরম্পরার এ পেশায় পাঁচ বছরে আগেও বেশ সফলতা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বাজারে আসার কারণে কমে গেছে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা। অন্যদিকে, প্লাস্টিক পণ্যের দাম বাঁশের তৈরি পণ্যের চেয়ে অনেক কম।
ওই এলাকার বাঁশমালি খুদিরাম সাহা জানান, বাঁশের তৈরি পণ্য ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানা নেই তার। তাই পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এটা করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিলে এ এলাকার পরিবারগুলো আরও ভালো পণ্য তৈরি করে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাফীয়ার রহমান বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন সময়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে থাকেন এলাকার কৃষক ও বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। আগামীতে সুযোগ থাকলে বাঁশমালিদের দক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড