আল মামুন জীবন, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত প্রচণ্ড শীত। এরপর দুপুরের দিকে উঁকি দেয় সূর্য। আবার মাঝে মাঝে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এ অবস্থায় বীজতলায় বোরো ধানের চারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দিন দিন হলুদ বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে চারাগুলো। এতে ঠাকুরগাঁওয়ের বোরো চাষিদের এখন মাথায় হাত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো চাষের বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। অনেক বীজতলার বোরো চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চাষিরা বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে বোরো বীজতলায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে কিংবা হরেক রকমের কীটনাশক স্প্রে করেও তেমন কোনো সুফল পাচ্ছেন না।
সদর উপজেলার বোরো চাষি মশিউর রহমান বলেন, ‘১০ শতক জমিতে বীজতলা করেছি। গত কয়েকদিনের টানা শীতের কারণে চারাগুলো বিবর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিভিন্নজনের নানা পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।,
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিনমারী এলাকার বোরো চাষি ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘দুবছর ধরে ধানের দাম নেই। খাওয়ার জন্য বোরো চাষ করব অল্প জমিতে। কিন্তু টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলা নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। আবহাওয়া ভালো না হলে এ বছর সঠিক সময় বোরো চাষ করা সম্ভব হবে না।’
সদর উপজেলার রুহিয়া কুজিশহর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার একমাত্র অর্থকরী ফসল হলো এই বোরো ধান। সারা বছরের ভাত, পরিবারের খরচ ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ এখান থেকেই প্রতিবছর তুলে থাকি। কিন্তু বীজতলায় বিচন (চারা) নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি।’
ওই এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি পাঁচ বিঘা জমি বোরো চাষের জন্য প্রস্তুত করেছি। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ১০ শতক জমির বীজতলার চারা জ্বলে গেছে। কৃষি অফিসারদের দেওয়া পরামর্শও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আরাজী সরলিয়া গ্রামের বোরো চাষি আব্দুল জলিল বলেন, ‘বোরো চারা রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছি তাতেও চারা নষ্ট হতে শুরু করেছে। এ দুর্যোগের কারণে বোরো আবাদ করতে পারবো কি না, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব উদ্দীন বলেন, শীতের সময় এমন সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সঠিক পরিমাণের ইউরিয়া সার অথবা জিপসাপ সার দেওয়া হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। তাছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা চাষিদের এ সমস্যা নিরসনের জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। আমরা আশা করছি, চাষিরা সময় মতো বোরো চাষ এবং জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি। এর আগে গত বছর জলায় এ বছর ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১২ হাজার ৯৪ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ৪৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি।
এছাড়া গত বছর ৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা করেছিল চাষিরা। টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে যদি বোরো ধানের বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়, তবে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ জেলা বড় ধরনের হোঁচট খাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড