• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড : চার্জশিট আন্দোলনে কেটে গেল বছর

  আল মামুন জীবন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৪১
ধর্ষণ
ধর্ষণ ও হত্যা (প্রতীকী ছবি)

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বিয়ের আশ্বাসে ক্রমাগত ধর্ষণের শিকার হয় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। ধর্ষণের শিকার সেই স্কুলছাত্রী অক্টোবর মাসে কন্যা সন্তানের মা হলেও সেই মামলার চার্জশিট ও প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করতে করতে কেটে গেল বছর। এ দিকে ডিসেম্বর মাসের ১৯ তারিখে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর মরদেহ ঘরের মাটি খুঁড়ে বের করে পুলিশ। বছর চলে গেলেও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে আন্দোলন চলমান রয়েছে।

ধর্ম ত্যাগের আশ্বাসে লাগাতার ধর্ষণ, স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা

সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে একাধিকবার অবৈধভাবে শারীরিক মেলামেশা করে মোহিন চন্দ্র সিংহ (২৩) নামে এক যুবক। দীর্ঘদিন শারীরিক মেলামেশার ফলে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী এখন ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ধুকুরঝাড়ী টাকাহাড়া গ্রামের এ ঘটনা। ধর্মের কারণে প্রথমে বিষয়টি ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার গোপন করলেও এখন বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী থানায় সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে ওই যুবকসহ তার ভাই বিদ্যানাথ সিংহ (২১), তার বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ (৪৮) এবং তার মা মিলন বালাকে (৪৫) আসামি করে মামলা দায়ের করে ছাত্রীর বাবা।

ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণের শিকার সেই স্কুলছাত্রী কন্যা সন্তানের ‘মা’

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে বিয়ে করার আশ্বাসে ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কন্যা সন্তানের ‘মা’ হয়েছেন।

গত ২৭ অক্টোবর বিকালে ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোরীর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ধর্ষণের ঘটনায় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কিশোরীর বাবা বালিয়াডাঙ্গী থানায় ধর্ষণের অভিযুক্ত, তার ভাই, বাবা ও মাকে আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন- বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ধুকুরঝারী টাকাহারা গ্রামের মোহিন চন্দ্র সিংহ (২৩)। অন্য আসামিরা হলেন- তার ভাই বিদ্যানাথ চন্দ্র সিংহ (২১), বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ (৪৮) ও মা শ্রীমতি বালা (৪৫)।

মামলা হওয়ার পর পুলিশ ধর্ষকের বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র ও শ্রীমতি বালাকে গ্রেফতার করলে পরে তারা জামিনে মুক্ত হন। তবে মামলা দায়েরের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রধান আসামি মোহিনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। শিশুটি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। মামলার প্রধান আসামিকেও ধরতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার চার্জশিট দেয়নি।

ঠাকুরগাঁওয়ে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে রাখা হয় স্কুলছাত্রী সুমনাকে

নিখোঁজের চারদিন পর বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমনার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়া এলাকার ইয়াসিন আলীর বাসায় মেঝের মাটি খুঁড়ে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

স্কুলছাত্রী সুমনা হত্যাকাণ্ড : বিচারের দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে কর্মসূচি অব্যাহত

সুমনা হকের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে বসে নেই ঠাকুরগাঁওয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন এলাকার সমাজকর্মী, সংস্কৃতি কর্মী, সংবাদকর্মী, সুশীল সমাজসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশু সুমনা আক্তার (৯) হত্যার প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত উত্তাল ঠাকুরগাঁও। হত্যাকাণ্ডের পরদিন থেকে বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা মোড়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বিকাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মানুষের গণস্বাক্ষর নেয় তারা। এর আগে গত শুক্রবার ও শনিবার ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) হত্যাকারী রিয়াজ আহম্মেদ কাননের কঠোর শাস্তির দাবিতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ও ঠাকুরগাঁও পুলিশ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রবিবার ও সোমবার রাতে জেলার বড় মাঠে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি এবং নীরব মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সুমনার বাবা ও মা সঙ্গে ছিলেন।

এ দিকে, জেলার বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ উপজেলায় সুমনা হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে গত সোমবার সকালে। সুমনা হত্যার ঘটনায় মূল হোতা রিয়াজ আহম্মেদ কানন, তার বাবা ইয়াসিন হাবিব কনক, মা রুকসানা বেগম ও নানা অকছেদ আলীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার ৩

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করে ঠাকুরগাঁও পুলিশ।

গত ২৭ অক্টোবর সকালে জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর আটক ৩ জনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মামলা করে ওই স্কুলছাত্রী। গ্রেফতারকৃতরা হলো- দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শাহবাহান ডাবরা এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম রিয়াদ (২০), তার বন্ধু ঠাকুরগাঁও শহরের সেনুয়াপাড়া এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে ফয়সাল (২০) ও শহরের আদর্শ কলোনির মুন্সিপাড়া এলাকার বদিউজ্জামানের ছেলে সবুজ (২০)।

গত ২৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে রওশনপুর এলাকা থেকে এই কিশোরীকে রিয়াজুলসহ চারজন মুখ চেপে ধরে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান। পরে গোবিন্দনগরের শ্রীকেষ্টপুর আদিবাসী পাড়ার একটি আখ ক্ষেতে নিয়ে চারজন তাকে ধর্ষণ করে।

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুকে ধর্ষণের পর বাড়ির পাশে ফেলে গেল যুবক

গভীর রাতে একা ব্যক্তিগত কাজে ঘরের বাইরে এসেছিল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুখ চেপে ধরে স্কুলছাত্রীকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যায় দুই বন্ধু। প্রায় ৬ ঘণ্টা এক বন্ধুর পাহারায় স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে আরেক বন্ধু। ভোরবেলা স্কুলছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির পাশে ফেলে পালিয়ে যায় ধর্ষণের অভিযুক্তরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রুহিয়া থানা এলাকার কানিকশালগাঁও গ্রামের ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা ধর্ষক ও সহযোগীর বন্ধুর বিরুদ্ধে রুহিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত যুবক সদর উপজেলার রুহিয়া থানার কানিকশালগাঁও গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও তার সহযোগী একই গ্রামের ইন্তাজুল হকের ছেলে রাশেদ (১৮)। সেই মামলা এখনো চলমান।

ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণের সময় আটক ধর্ষক সালিশ থেকে ছিনতাই

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঘরে ঢুকে আলিম দ্বিতীয় বর্ষের মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের সময় হাতে নাতে আটকের পর সালিশ বৈঠক থেকে ধর্ষণের অভিযুক্ত যুবককে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত মনসুর আলীসহ (২৫) আরও ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন মাদরাসা ছাত্রীর বাবা।

ধর্ষণের অভিযুক্ত মনসুর আলী (২৫) ঢাকা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের বোয়ালধার গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- একই গ্রামের আ. গণির ছেলে দুলাল হোসেন (৩০), জুয়েল রানা (২১), আজগর আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৩০), শামীম হোসেন (২৮), খলিলুর রহমানের ছেলে শাহিনুর (২৫), দবিরুল ইসলামের ছেলে শাহজালাল (২৫), সাইদুর রহমানের ছেলে উজ্জ্বল (১৮), হাসান আলীর ছেলে রব্বানী (৩০), মখলেসুর রহমানের ছেলে রেজাউল হক (২৫), মৃত মহিম উদ্দীনে ছেলে আ. গণি (৪০) ও রাণশীংকৈল থানার নেকমরদ গ্রামের দবিরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল হক (৩০)।

মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা ছাত্রী ও কলেজ ছাত্র মনসুর আলীর দীর্ঘদিন ধরে প্রেম চলছিল। ঈদের কলেজ ছুটিতে বাসায় এসে সোমবার (১২ আগস্ট) রাত ২টার সময় মাদরাসা ছাত্রীর সাথে দেখা করতে তার ঘরে গোপনে প্রবেশ করে মনসুর। গভীর রাতে মাদরাসা ছাত্রীর মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনা টের পেয়ে মাদরাসা ছাত্রীর পরিবারের লোকজন তাকে হাতে নাতে আটক করে।

মাদরাসা ছাত্রীর চাচা জানান, ঈদের দিন সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করার জন্য মাদরাসা ছাত্রীর বাড়িতে বৈঠকে বসে দুই পরিবারের লোকজন। হঠাৎ মামলার আসামিরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ধর্ষণের অভিযুক্ত মনসুর আলীকে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন- ২০১৯ এ ঠাকুরগাঁওয়ে আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনা

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড