এস.এম. মিজানুর রহমান মজনু, ভালুকা, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাড়া বাসায় বসবাস করেন ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব হায়দার (৬৯)। দেশকে শত্রুমুক্ত করা সেই রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার শেষ জীবন কাটছে ভাড়া বাসায় অর্থ কষ্টের মধ্যে।
মহান বিজয়ের মাসে একান্ত আলাপচারিতায় দৈনিক অধিকারকে ইয়াকুব হায়দার বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের ও দেশীয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করতে। দেশকে শত্রু মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভাই-বোন, মা- সবার মায়া ত্যাগ করে দেশকে মুক্ত করতে চলে গেছি যুদ্ধে। ১১ নম্বর সেক্টরে, ঢাকা উত্তর ময়মনসিংহ দক্ষিণ কমান্ডার আফসার উদ্দীন আহম্মেদের অধীনে আমরা যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধকালীন আমাদের সহযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ভাওয়ালিয়া বাজারে সম্মুখ যুদ্ধে মারা যান। কিছুদিন পরে আমরিতলা যুদ্ধে মমতাজ নামের আরেক সহযোদ্ধা মারা যান। দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহারে থেকেছি।
মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব হায়দার বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালীন সাড়ে চার মাস পর আফসার উদ্দিন আহমেদ আমাকে প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে আমি ত্রিশাল থানার পুরাবাড়ি, কাশিগঞ্জ এবং ভালুকা থানার মেদুয়ারী ও বান্দিয়া যুদ্ধ করেছি। পরবর্তীকালে ভালুকা থানার পাকবাহিনীর ক্যাম্পে, রাজাকারের ক্যাম্পে আমরা তিনবার হামলা চালাই। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে পাকবাহিনীকে ধাওয়া করে শিবগঞ্জে ধোপাঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাই। পরে তারা পালিয়ে যায়।’
পরিবার-পরিজনদের নিয়ে স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ‘পরিবারের কথা মনে করে অনেক কেঁদেছি। কিন্তু সব কিছুর ওপর দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভেবেছি সর্বক্ষণ। আমি যুদ্ধের শুরুতেই আমার বাড়ি ময়মনসিংহ ভালুকা থানার ভালুকার বাজার থেকে যোগদান করি। আমার মা আমাকে যুদ্ধে যেতে আদেশ করলে আমি ভাই-বোনের মায়া ত্যাগ করে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পরবর্তীকালে আমার বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আমি বাড়িতে ফিরে আসি।’
৭১ এর রণাঙ্গনের সেই মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব হায়দার বর্তমানে একটি গাড়ির গেরেজের ভেতরে ছোট একটা খাবারের দোকান চালান। এছাড়া সরকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে যা পান, তা দিয়ে কষ্টে চলে তার জীবন-সংসার।
মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব হায়দার বলেন, ‘আমার এক মেয়ে। মেয়ে এখন স্বামীর সংসার করছে। কোনো রকম কষ্টে জীবনযাপন করছি। সরকার আমাকে যে সম্মানি দেয় তাই দিয়ে কোনো রকম দিনাতিপাত করছি। সরকার আমাকে ১০ শতাংশ জমি দিয়েছে। তবে ওই জমিতে আমার পক্ষে বাড়ি বানানো সম্ভব নয়। কেননা জমির মাঝখানে গভীর গর্ত। এই জমি মাটি দিয়ে ভরাট করা আমার পক্ষে অসম্ভব।’
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার চাওয়া পাওয়া কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা দেখে ভালো লাগছে। দুর্নীতি দূর হোক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাক এটাই আমার চাওয়া। তবে আমরা আজও বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর।’
নিজের জন্য কিছু চান কি না- জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব হায়দার বলেন, ‘আমি ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করছি। এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছি। সরকার যদি কোনোভাবে সহায়তা করে তবে হয়তো বাকিটা জীবন একটু শান্তিতে কাটাতে পারব।’
বিজয় দিবসে আপনার প্রত্যাশা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজাকারদের বিচার দেখে যেতে পারছি, দেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে। সকল মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে, জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশটা এভাবে এগিয়ে যাক; মহান বিজয়ের মাসে এটাই আমার প্রত্যাশা।’
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড