• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শেরপুরে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে বদলির হুমকি

  শেরপুর প্রতিনিধি

২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:২৯
জেলার ম্যাপ
ছবি : দৈনিক অধিকার

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদামে ইতোপূর্বে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা সেই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আয়মান বিনতে ফেরদৌস নূপুরকে নিম্নমানের চাল নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে ব্যর্থ হলে চক্রটি এখন তাকে বদলিসহ নানা হুমকি দেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া শুরু করেছে চক্রটি।

জানা যায়, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঝিনাইগাতী উপজেলা খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন নূপুর। এরপর খাদ্য গুদামের তৎকালীন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দেবনাথের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে তিনি দেখেন ওই গুদামের বেশিরভাগ চালই নষ্ট। পরে বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাৎক্ষণিক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

একই সময় অভিযুক্ত বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ ৬৪৩ মেট্রিক টন নষ্ট চাল গুদাম থেকে বের করে সমপরিমাণ ভালো চাল সেখানে সরবরাহ করেন। তবে ৯শ টন নষ্ট চাল সে সময় সরানো যায়নি।

এ দিকে, তদন্ত করে কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকাশ দেবনাথকে সাসপেন্ডসহ অন্যান্য সকলকেই তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। এ সময় বিকাশ দেবনাথসহ নষ্ট চাল সরবরাহের দায়ে ওই উপজেলার ১০টি মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করে খাদ্য বিভাগ। এরপর তদন্তে উঠে আসে- দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইগাতীর মিল মালিকদের একটি অসাধু সিন্ডিকেট বিকাশ দেবনাথের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই গোডাউনে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করে আসছিলেন।

এরই মধ্যে গতবার নষ্ট চাল সংগ্রহের শেষ দিকে যোগদান করেই নূপুর ওই সিন্ডিকেটের কবলে পড়েন। সম্প্রতি নতুন এই কর্মকর্তাকে আগের মতোই চাল গ্রহণ করতে চাপ দেয় ওই সিন্ডিকেট। তবে ওসিএলএসডি নূপুর আগের মতো নষ্ট চাল সংগ্রহ করতে না চাইলে অনেক ট্রাকভর্তি চাল গুদাম থেকে ফেরত যায়। তখন থেকেই ওই চক্রটি এই কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত রয়েছেন।

এ দিকে, প্রতিবারের মতো সরকার এবারও আমন ধান সংগ্রহ শুরু করেছে। ঠিক এই সময় নূপুরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে মিলারদের একাংশের স্বাক্ষর নিয়ে চক্রটি দুর্নীতি অভিযোগে তাকে বদলির চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এতে যোগ দিয়েছে ওই সিন্ডিকেটসহ তালিকাভুক্ত মিলারদের একাংশ। সিন্ডিকেটটির ধারণা, নতুন এই কর্মকর্তার জন্যই বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহকালে গুদামের কর্মকর্তা সাসপেন্ড, মিল কালো তালিকাভুক্তকরণ ও ট্রাকভর্তি চাল ফেরতের মতো ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসিএলএসডি নূপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের অন্যতম মেসার্স জাকির চাল কলের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা হাসকি মিলের চাল দিতে গেলে বর্তমান কর্মকর্তা তা গ্রহণ করেননি, অটো মিলের চাল আনতে বলেন। এতে আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি।’

বিষয়টিতে উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ দিকে, সাধারণ মিল মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক, আবুল বাশার ও আব্দুল কাফি জানান, ‘আমরা মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য স্বাক্ষর করেছি, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত কোনো কিছু দেইনি।’

অন্যদিকে মিল মালিকদের অপর পক্ষ জানিয়েছে, ‘ভুল বুঝিয়ে আমাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে- এই মর্মে ইতোমধ্যেই বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতীর ওসিএলএসডি নূপুর জানান, ‘আমি সরকারের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ওই চক্রের তোপের মুখে পড়েছি। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে। আমি এখানে নতুন, অনেককে চিনিই না।’

বিষয়টিতে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘চাল সংগ্রহে কোনোভাবেই সিন্ডিকেট তৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না। সরকারি চাকরিতে বদলি আছে। তবে বর্তমান ওসিএলএসডি যদি হুমকিতে থাকেন তাহলে তিনি চাইলে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার জানান, ‘আমরা ঝিনাইগাতীর বর্তমান ওসিএলএসডির কোনো অনিয়ম দেখছি না। একজন কর্মকর্তা কাজ শুরুই করেননি অথচ তিনি দুর্নীতি করেছেন, তাকে বদলি করতে হবে- এমন প্রশ্নই আসে না। আর অভিযোগ কেউ করতেই পারে, সেটা সরকার দেখবে ওই কর্মকর্তা আইনের মধ্যে আছে কি নেই।’

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড