মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, বান্দরবান
বান্দরবানের শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক বাড়তে শুরু করেছে। শীতের পরশে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জেলার পর্যটন শিল্প। শীতের শিশির ভেজা সকালের পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণপিয়াসু মানুষের আনাগোনা বাড়ার কারণে বদলাতে শুরু করেছে এই জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর দৃশ্যপট।
শুক্রবার-শনিবার ছাড়াও খ্রিস্টিয় সম্প্রদায়ের উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস উপলক্ষে বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলা নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, চিম্বুক, নীলগিরি, স্বর্ণ মন্দিরসহ টুরিস্ট স্পটগুলোতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়েছে। এক দিক দিয়ে এই শীতের মৌসুম হলো পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
প্রাকৃতিক নির্মল ছোঁয়া পেতে পার্বত্য জনপদের পাহাড়ের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিয়াসু পর্যটকরা। প্রচণ্ড এই শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসে আছে এই এলাকার পর্যটন শিল্পের সৌন্দর্য বিকাশে। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে ঘুরে বেড়াচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা।
বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচলে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে
এ দিকে বান্দরবান জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য এই অঞ্চলের সহজ-সরল পাহাড়ি-বাঙালি মানুষগুলোর রুটি-রুজিও। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের কারুকাজ, চিম্বুক পাহাড়ের বম সম্প্রদায়ের তৈরি তাঁতের কাপড়সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলোর বেচা-বিক্রিও জমে উঠেছে। আর পর্যটকবাহী গাড়িসহ পরিবহন ব্যবসা অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নিয়ন খান ও রিফাত হাসান বলেন, আমাদের প্রতি বছরই বান্দরবান বেড়াতে আসা হয়। পাহাড় দেখলে আমাদের মনটাও পাহাড়ের মতো বিশাল হয়ে যায়। তবে বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাওয়া-আসার ভাড়া হচ্ছে ৪২ টাকা। কিন্তু কাউন্টারে গিয়েও নীলগিরি টুরিস্ট গাড়ি মিলছে না।
কারণ চালকদের চাহিদামতো অতিরিক্ত দুই আড়াই হাজার টাকা দিলেই গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই শুধুমাত্র নীলগিরি হলে যাবে না। সব পর্যটন স্পট ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে পারলে তারা ভাড়ায় যাচ্ছে।
টুরিস্ট গাড়িগুলো ভোগান্তি এবং পর্যটক হয়রানি যেন দিন দিন আরও বাড়ছে। পর্যটকদের জিম্মি করে কয়েকগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিচ্ছে চালকরা। পর্যটক হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন বান্দরবান জেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকেরা।
কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক জোসনা আক্তার ও ইলিয়াস বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে পর্যটক হয়রানি বাড়ছে বান্দরবানে। নীলাচলে টুরিস্ট স্পটে যেতে একবার রাস্তার টোল আরেকবার স্পটে প্রবেশের টিকিট এবং আরেকবার গাড়ি ভিতরে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা আদায়। এমনভাবে পর্যটকদের হয়রানি করলে কীভাবে বান্দরবানে পর্যটকরা বেড়াতে আসবে।
বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচলে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে
তারা আরও জানান, এভাবে ভোগান্তি এবং হয়রানিগুলোর কারণে পর্যটকের পরিমাণ কমে যেতে পারে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানান, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে পার্বত্য এ জনপদের অর্থনৈতিক চাকা ওঠানামা করে এই শীতে ও পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটন শিল্প। চাঙ্গা হয়ে উঠছে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য। তিনি আরও বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে হোটেল মোটেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট এবং হস্তশিল্প,কাপড়ের দোকানসহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
নীলগিরি সড়কে অবস্থিত শৈলপ্রপাত পর্যটন এলাকার তাঁতের কাপড়ের দোকান ব্যবসায়ী লালজিং নুয়াম ও তার মেয়ে প্রিন্সেস এশা (জাম্পার) বলেন, পাহাড়িদের তৈরি তাদের পোশাক এবং বাঁশ কাঠের তৈরি হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের ওপর আকৃষ্ট হচ্ছে পর্যটকরা। তার সঙ্গে বান্দরবনে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যায়। শীতে পর্যটন এলাকায় হস্তশিল্প ও কোমর তাঁতের কম্বল এবং মাফলারগুলো বেশি বেচা-কেনা বেশি হয়।
পর্যটকদের জন্য চাঁদের গাড়ি মাইক্রো সমিতির সভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকবাহী প্রায় তিন শতাধিকের মতো গাড়ি রয়েছে বান্দরবনে। গাড়িগুলো সঙ্গে জড়িত কয়েক শ্রমিক রয়েছে। সারা বছর তারা অপেক্ষা করে এ মৌসুমের জন্য। শীত আসলে পর্যটকের আগমন বাড়ায় তাদের মুখে হাসি ফোটে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও পর্যটক হয়রানির প্রমাণ যদি তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যায় সমিতি থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচলে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার দৈনিক অধিকারকে বলেন, বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ। যেকোনো দুর্গম এলাকায় যেতে কোনোরকম সিকিউরিটি ফোর্স দরকার পড়ে না। কারণ বান্দরবানবাসীরা পর্যটকদের মেহমান মনে করেন এবং এটাকে তারা আশীর্বাদ মনে করেন। এখানে বেশি বেশি যাতে পর্যটক আছে সে কারণেই তারা পর্যটকদের সহযোগিতা করেন।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার, বিজিবিসহ সকল প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তারা তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনো সহযোগিতা চাইলে যে কোনো জায়গায় যেতে তাদের আমরা সহযোগিতা করি। পুরো বান্দরবান এলাকা আমরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছি। নিরাপত্তা ভালো হয়েছে বিধায় বান্দরবানে দিনদিন পর্যটক বাড়ছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, এই এলাকার মন্ত্রী মহোদয়ও পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। পুলিশ সুপার বলেন, অনেক দুর্গম এলাকা আগে পায়ে হেঁটে যেতে হতো যেমন বগা লেক। সেখানে এখন গাড়িতে করে যাওয়া যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে বান্দরবানে দিনদিন পর্যটক বাড়ছে।
ওডি/আরবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড