• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চুয়াডাঙ্গায় উচ্ছেদ আতঙ্কে বীরাঙ্গনা শুকুরন নেছা

  কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা

১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৭
চুয়াডাঙ্গা
বীরাঙ্গনা শুকুরন নেছা

১৯৭১ এ হানাদার বাহিনীর তপ্ত বুলেটের ভয় তুচ্ছ করে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার মেয়ে শুকুরন নেছা। দেশ থেকে পাকসেনা হটাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিপাগল বাংলার দামাল ছেলেদের সাথে কাজ করেছিলেন এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে। হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও নিজের সবকিছু খুইয়েও যুদ্ধ থেকে পিছপা হননি তিনি।

দেশ স্বাধীনের পর জেলার আলমডাঙ্গার কুমার নদের পাড়ে একটি ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন ওই বীরাঙ্গনা নারী। কিন্তু সেখানেও দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে উচ্ছেদ নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই বীরাঙ্গনার হাতে। এতে করে মাথাগোঁজার একমাত্র আশ্রয় হারানোর আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় বীরাঙ্গনার পরিবার। এ দিকে, দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও বীরাঙ্গনা শুকুরন নেছার স্থায়ী মাথাগোঁজার ব্যবস্থা না হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

শুকুরন নেছার বয়স যখন মাত্র ২২ বছর, তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের পাশবিক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুকুরনকে দেশের জন্য লড়াই থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

যুদ্ধের সময় নির্যাতিত হওয়া আনুমানিক দুই হাজার মহিলাদের মধ্যে একজন ছিলেন শুকুরন নেছা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মহিলাদের ‘বীরাঙ্গনা’ হিসাবে সম্মানিত করেছিলেন এবং তাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াও তার উদ্যোগে শুরু হয়েছিল। কিন্তু জাতির পিতার হত্যার পরে তা স্থগিত হয়ে যায়। যুদ্ধের সময় বেশ কয়েকজন নারী তাদের জীবন দিয়েছিলেন এবং শুকুরন নেছার মতো আরও অনেকে তাদের লড়াই চালিয়ে যান।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের একটি আদেশের পরে বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ৪৩ বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করে। শুকুরন নেছাও তাদের মধ্যে ছিলেন এবং সরকারি সুবিধায় জীবনযাপন করছেন।

আলমডাঙ্গার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে শুকুরন নেছার স্বীকৃতি এসেছে। তিনি জানান, ৭০ বছর বয়সী এই নারী তার দশ সদস্যের পরিবারের সঙ্গে কুমার নদের তীরে বাস করছিলেন তবে সম্প্রতি তাকে জায়গাটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুকুরন নেছা জানান, আমি আমার জীবনের ৫০ বছর কুমার নদের তীরে কাটিয়েছি। স্বামীর মৃত্যুর পরে আমি চার সন্তানের সঙ্গে এখানে ছিলাম। কুঁড়েঘর আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। তিনি ভাঙা গলায় বললেন, যদি আমাকে উচ্ছেদ করা হয় তবে আমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে পরিবার নিয়ে রাস্তায় জীবন কাটাতে বাধ্য করা হবে। আমি উদ্বিগ্ন এবং রাতে ঘুমাতে পারি না।

আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের প্রাক্তন কমান্ডার শফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার বলেন, বীরাঙ্গনা শুকুরন নেছার স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, সরকার গৃহহীনদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যা হাজার হাজার মানুষের সুবিধার্থে। দুর্ভাগ্যজনক যে একজন মহিলা যিনি নিজের সম্মান উৎসর্গ করেছিলেন এবং আমাদের পতাকার জন্য লড়াই করেছিলেন, তিনি এখন বেঁচে থাকার জন্য জায়গা খুঁজে পেতে লড়াই করছেন। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড