ভৈরব প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
রাতের অন্ধকার আর ভোরে শীতের কুয়াশায় একের পর এক ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ফলে গত দুই সপ্তাহে ২০ জনের বেশি লোক ছিনতাই ও ডাকাতির কবলে পড়েছেন। আর সঙ্গে থাকা নগদ টাকা বা দামী মোবাইল ফোন দিতে সামান্য দেরি হলেই ছুরিকাঘাতের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
এই চিত্র কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের অলি-গলিসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোর। ভুক্তভোগীদের দাবি, একের পর এক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মানুষের রক্ত ঝরলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা।
জানা যায়, সিলেট থেকে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরে শহরের চন্ডিবের এলাকার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু মিয়া। নুরু মিয়ার গ্রামের বাড়ি উপজেলার বাশঁগাড়ী গ্রামে। তিনি পৌনে ৬টার দিকে শহরের গাছতলা ঘাটের সেতু এলাকা অতিক্রম করে সমিলের কাছে এলে তাকে কয়েকজন যুবক ঘিরে ফেলে। একই সঙ্গে পকেটে থাকা নগদ নয় হাজারের অধিক টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। মোবাইল ফোন দিতে দেরি করলে নুরু মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে ডাকাতরা। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে গুরুতর আহত নুরু মিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কর্তব্যরত চিকিৎসক।
শুধু তাই নয়, গত ৮ থেকে ১১ ডিসেম্বর টানা ৪দিন একই স্থানে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে নয়জনের মতো ব্যক্তিকে গতিরোধ করে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। এ সময় তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে তারা। এছাড়াও গত ৯ ডিসেম্বর শহরের দড়ি চন্ডিবের এলাকায় রাত ১২টার দিকে সিএনজি চালিত অটো রিকশার গতি রোধ করে যাত্রীদের নগদ টাকা ও মোবাইল হাতিয়ে নেয় ডাকাতরা। গত ৫ ডিসেম্বর মধ্যেরচর আলগা বাড়ি সড়কের ৩ রাস্তার মোড়ে সোহরাব নামে এক যুবককে আটকে কুপিয়ে আহত করে ডাকাতের দল। এ সময় তার ডান হাতের তিনটি আঙ্গুলের রগ কেটে যায় বলে দাবি সোহরাবের স্বজনদের। তার অপরাধ সে কয়েকজন যুবক নিয়ে বৈদ্যুতিক লাইটের আলোতে ব্যাডমিন্টন খেলে। এতে ডাকাতি করতে সমস্যা হয় ডাকাতদের। তাছাড়াও গেল ১ ডিসেম্বর উপজেলার কালিকা প্রসাদের গাজিরটেক এলাকায় এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিনিয়ত উপজেলার গাজিরটেক, মধ্যেরচর ও গোছামারসহ পৌর শহরের চন্ডিবের গাছতলা ঘাট, স্টেডিয়াম সড়ক, দড়ি চন্ডিবের এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ফলে মানুষজন রাতের অন্ধকার আর ভোরে শীতের কুয়াশায় আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে।
চন্ডিবের এলাকার দোকানদার আমিনুল ইসলাম মিয়া জানায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে গাছতলা ঘাটের সেতু এবং সমিলের কাছে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে।
এছাড়াও গাছতলা ঘাট এলাকার মৌলভি বশির মিয়া নামে মসজিদের এক মুয়াজ্জিন জানান, তিনি মেয়েদের পড়াশুনার কারণে চন্ডিবের এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে। ফলে প্রতিদিন ভোরে ফজরের আজান দিতে মসজিদে যেতে হয়। তিনি বেশ কয়েকদিন ডাকাতের কবলে পড়েছেন। ৮ ডিসেম্বর তার পেটে ছুরি ঠেকিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। ফলে কয়েকদিন ধরে তিনি রাতে বাসায় ফেরেন না। আর বাসায় এলেও আবার মসজিদে যেতে সাহস পান না।
এ দিকে গেল দুই সপ্তাহে ১০ জনের বেশি লোক ছিনতাই ও ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন বলে নিশ্চিত করেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, আহতের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চন্ডিবের এলাকার বাসিন্দা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোমেন মিয়া জানান, ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে চিহ্নিতদের ধরিয়ে দিলেও প্রভাবশালীদের তদবিরে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। আর একের পর এক ডাকাতি হলেও অপরাধীরা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে এই নিয়ে চিন্তিত কমলপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী সোহাগ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভৈরব থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীন মুঠোফোনে জানান, এসব ঘটনায় এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। তাছাড়া আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরে একজন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন বলে শুনেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, গভীর রাতে কিংবা ভোরে যেসব লোকজন চলাচল করবে, তারা যেন অবশ্য পুলিশের সহযোগিতা নেয়। এছাড়াও রাতে পুলিশের আটটি টিম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত থাকে, যা আগে ছিল না।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড