• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জরাজীর্ণ বাড়িতে বাস করছেন মুক্তিযোদ্ধা হামিদ

  বগুড়া প্রতিনিধি

১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:২৩
মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ
মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ ও জরাজীর্ণ বাড়ি ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া কাহালুর উলট্ট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদের ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। রোগে-শোকে কাতর এই মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে পরিবার নিয়ে জরাজীর্ণ মাটির ভাঙা বাড়িতে বসবাস করছেন।

আ. হামিদ ১৯৫২ সালের ১২ জুন কাহালু পৌরসভার উলট্ট গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সবেমাত্র দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ওই সময় আ. হামিদ দেশের নিরীহ মানুষের কথা বিবেচনা করে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে যখন এ দেশের সূর্য-সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান তখন আ. হামিদও প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ভারতের বোয়ালদা ক্যাম্পে যান। তৃতীয় ব্যাচে তিনি ট্রেনিং নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়ন ও সিপিবি যৌথ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। ৭ নম্বর সেক্টরে নুরুল আনোয়ার বাদশার নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধ করেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে লক্ষ করা গেছে আ. হামিদের মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩০৬১১০০৩৩ ও গেজেট নম্বর ১৯১৮।

জানা গেছে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। বর্তমানে এই গেরিলা যোদ্ধা অসুখ-বিসুখ আর আর্থিক অভাব-অনটনে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। তিনি ৪ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। ২ কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আরিফুল বলতে গেলে বেকার। দ্বিতীয় ছেলে আশিকুল মাস্টার্স পাশ করে কাহালু মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্কুলে চাকরিতে যোগদান করলেও তার কোনো বেতন হয়নি। তৃতীয় ছেলে আসাদুজ্জামান অর্থ কষ্টে লেবার হিসেবে কাজ করছে। ৪র্থ ছেলে আয়ুব আলী অনার্সে পড়ছে।

এই বীর যোদ্ধার নেই তেমন সম্পত্তি ও আয়-রোজগার। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন ১২ হাজার টাকা। এই ভাতার টাকা দিয়ে ঠিকমতো চলছে না সংসার। তিনি ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছ ঋণ নিয়ে ভারতেও গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও অর্থাভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না। ওষুধবিহীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে কোনোমতে বেঁচে আছেন।

এ দিকে তার পূর্ব-পুরুষের আমলে নির্মাণ করা একটি মাটির ভাঙা বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ। মাটির দেয়ালে ফাটল ধরে খসে খসে পড়ছে মাটি। পুরো বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায়। অর্থাভাবে সেই বাড়িতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ক্যানসার রোগী মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ।

কাহালু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নজিবর রহমান জানান, আ. হামিদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কলকাতায় তিনি চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়েছে। ডাক্তার জানিয়েছে, প্রতি মাসে তাকে একটি কেমোথেরাপি দিতে হবে। সেই কেমোথেরাপির দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। টাকার অভাবে গত মাস থেকে কেমোথেরাপি দিতে পারেননি তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাছুদুর রহমান জানান, তিনি আবেদন করলে বাড়ির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। চিকিৎসার জন্য সমাজ সেবা অফিসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড