আবু তাহের, চট্টগ্রাম
ঢাকার বাইরে দ্বিতীয় রাজধানী কিংবা দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হিসেবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অবস্থান। এখানে দুটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। একটি নগরীর মনসুরাবাদে আরেকটি পাঁচলাইশে। দুই পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ভিড় দেশের অন্য যে কোনো আঞ্চলিক অফিসের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলে জানা গেছে। এখানে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাসপোর্ট না পেয়ে হতাশ এবং ক্ষোভে ফুঁসছেন।
চট্টগ্রামের দুই পাসপোর্ট অফিস ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট বা দালাল চক্রের বলয়। পাসপোর্টে দালালের মার্ক বা সংকেত থাকলে কাগজপত্র যাই থাকুক না কেন অনায়াসে মিলে পাসপোর্ট। অবশ্য এর জন্য অর্থ গুণতে হয় কয়েকগুণ বেশি।
দালালদের পাশ কাটিয়ে নিজেরা আবেদন ফরম জমা দিতে গেলে অবেদনটি নির্ভুল হলেও কোনো না কোনো ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ফেরত দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই বাধ্য হয়ে আবেদনকারীকে দালালদের কাছে যেতে হয়। ভাসমান দালাল, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য এবং পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। আর এ কারণেই দালালরা হয়ে উঠেছে এত ক্ষমতাধর।
পাসপোর্ট পেতে প্রথম যে হয়রানী তার নাম ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’। টাকা ছাড়া হয় না ভেরিফিকেশন। টাকা দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে এ দুয়ার, সে দুয়ার ঘুরে রিপোর্ট পাঠানোর পরও যথাসময়ে পাসপোর্ট মিলেছে এ রকম রেকর্ড নেই বললেই চলে। অথচ দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন কিংবা অন্য কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত ২১ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহকদের পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এছাড়া জরুরি ক্যাটাগরিতে ৬ হাজার ৯০০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত সাত কর্মদিবসের মধ্যে অর্থাৎ, ১০ থেকে ১৫ দিনে গ্রাহকরা পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়ার কথা। কাগজে কলমে এটা থাকলেও এক মাস সময় পরও হাতে মিলছে না পাসপোর্ট।
এ দিকে পাসপোর্ট অফিসে ডেলিভারি তারিখের অনেক পরে গিয়েও পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে জনগণের বাকবিতণ্ডা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ঢাকায় প্রিন্টে সমস্যার কথা বলেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও এই একই উত্তর মিলে সবসময়।
পাঁচলাইশে অফিসিয়াল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা এক শিক্ষিকা জানান, অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে যেতে হবে। অফিশিয়াল পাসপোর্ট জরুরি হিসেবে সাত কর্মদিবসে পাওয়ার কথা কিন্তু দেড় মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনো কোনো খবর নেই।
পটিয়া থেকে আসা এক ক্যান্সার রোগীর স্বজন জানান, আড়াই মাস হলো আবেদন জমা দিয়েছি। এখনো পাসপোর্ট পাওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই। অথচ আমার রোগীর অবস্থা খারাপ। এটা কারও দেখার গরজ নেই। তারা কেবল ঢাকার দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
পাসপোর্ট নিয়ে জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মাসুম হাসান বলেন, গত তিন-চার মাস ধরে এ সমস্যা হচ্ছে। সেটা শুধু চট্টগ্রাম নয় ঢাকাসহ সারা দেশের ৬৫টি আঞ্চলিক অফিসে একই সমস্যা। আমরা এখান থেকে আমাদের কাজ সেরে ঢাকায় পাঠাই কিন্তু ঢাকায় প্রিন্ট জটিলতার কারণে যথাসময়ে পাসপোর্ট আসছে না। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের।
এ সমস্যা সমাধানে ওনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমাদের হাতে নেই। আমরা ঢাকায় প্রতিনিয়ত বিষয়টা জানাচ্ছি। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। তবে ডিসেম্বরে ই-পাসপোর্ট চালু হলে সমস্যা কিছুটা দূর হবে বলে জানান তিনি।
জনগণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে এবং তারা স্বভাবতই ক্ষিপ্ত থাকবে। কিন্তু বিষয়টা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করায় আমরা কিছুটা অসহায়। আমরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা এটাকে হ্যান্ডেল করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট পাওয়ার অভিযোগের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, সেটা পুরোটাই শুনা কথা। তিনি বলেন, পরে জমা দিয়ে আগে পাসপোর্ট পেয়েছেন এমন উদাহরণ দিতে পারলে আমি সব দায় মাথা পেতে নেব। আমার অফিসের আশপাশে দালালদের কোনো অস্তিত্ব নেই। ডিজিটাল সিস্টেমে কারচুপিরও সাধ্য নেই। আজকে জমা দেওয়া আবেদন পেছনের তারিখে দেখানোরও সুযোগ নেই। সুতরাং কেউ পরে আবেদন করে আগে পাসপোর্ট পাওয়া প্রায়ই অসম্ভব।
মাসুম হাসান আরও বলেন, আগে টুকটাক কারণ দেখিয়ে আবেদন জমা না নেওয়ার যে অভিযোগ ছিল এখন সেটাও নেই। সে ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড