সুবল রায়, দিনাজপুর
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় ৪৬টি ইটভাটার মধ্যে ১৫টি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চললেও বাকি ৩১টি ইটভাটার নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে কিংবা কৃষিজমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তবুও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা বন্ধে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না।
চিরিরবন্দর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৮টি। এর মধ্যে পাবলিক কেজি স্কুল ৬৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজের সংখ্যা ২১৬টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে অবৈধ অনেক ইটভাটা।
এ দিকে, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি ভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্যাংকলরির জন্য রাস্তাঘাটে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। এছাড়া ওই ট্যাংকলরিগুলো রাস্তাঘাটে অবাধে চলাচল করায় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, কোথাও কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশ ঘেঁষে, আবার কোথাও কৃষিজমির ওপর নির্মিত হয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটা।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিরিরবন্দর উপজেলার ৪৮টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ১৫টি ইটভাটার। বাকি ৩১টি ইটভাটারই বৈধ কোনো কাগজপত্র বা অনুমতিপত্র নেই। অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন জানায়, ‘ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া যখন চোখে আসে, তখন খুবই খারাপ লাগে। চারদিকে অনেক ইটভাটা। এত ইটভাটা উপজেলায় দরকার নেই। আমি স্যারদের (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে) অনুরোধ করব, তারা যেন এগুলো বন্ধ করে দেয়।’
এ দিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে উপজেলায় অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সে কারণে নষ্ট হয়েছে অনেক কৃষিজমি। তারা আরও জানান, চিরিরবন্দর উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ২৬ হাজার ৪৫ হেক্টর। এসব জমির অধিকাংশ মাটি যাচ্ছে ইটভাটার কাজে। এতে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি ও ফসলের পরিমাণ।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ জি এম সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটা শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করছে না, এগুলো আমাদের ছোট ছোট শিশুদেরও ক্ষতি করছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া বর্তমানে শিশুদের বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ইটভাটার কাজে কৃষিজমির মাটি ব্যবহারের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, কৃষিজমির যে মাটি আমরা জমির উপরিভাগে দেখি সেই অংশের মাটি খুবই উর্বর। এই উর্বর মাটি যদি সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে সেই জমির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। যা জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ‘যারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে তদন্ত করেছি। যারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড