ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী পৌর শহরের পশ্চিম উকিলপাড়া এলাকায় দুই শিশুসহ এক গৃহবধূকে হত্যার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এর রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হলেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ।
দীর্ঘ এই সময়ে মামলার তদন্তে রদবদল হয়েছে চারজন তদন্তকারী কর্মকর্তার। পাশাপাশি পরপর চারবার রদবদল হওয়ায় তদন্তে ভাটা পড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ দিকে, ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়া গেলেও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে হত্যাকারী।
ভুক্তভোগী ওই পরিবার সূত্রে জানা যায়, শহরের পশ্চিম উকিল পাড়া পানির ট্যাংকি সংলগ্ন মোশারফ হোসেনের পুরাতন বাড়ির আবদুর রউফ ভূঁইয়া নিবাসের নিচতলায় দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন ইতালি প্রবাসী তারেক আহম্মদের স্ত্রী মর্জিনা আক্তার মুক্তা (২৬)।
২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে মর্জিনা আক্তার মুক্তা, তার মেয়ে সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম আহাম্মদ মাহিম (৮) এবং ছেলে মহিম আহাম্মদের (৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরবর্তীকালে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিহত মুক্তার ভাই আনোয়ার হোসেন মাসুম বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে, শুরু থেকে পুলিশ এটিকে বিষপানে আত্মহত্যা বলে আসছিল। পরে মামলাটির প্রথমে তদন্ত করেন ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ওসি রাশেদ খান চৌধুরী।
তিনি দীর্ঘ এক বছর ধরে হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু উদঘাটন করতে না পারায় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর আলোচিত এই ট্রিপল মার্ডার মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসে, হত্যাকাণ্ডে তৃতীয় পক্ষ জড়িত রয়েছে। পাশাপাশি ভিসেরা রিপোর্টেও মিলেছে একই আলামত।
এ দিকে, সন্দেহভাজন খুনি বিদেশে চলে যাওয়ায় মামলার তদন্তে কিছুটা ভাটা পড়ে। ওই সময় মুঠোফোনের কল লিস্ট ধরে সন্দেহভাজন ওই হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করে তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পরবর্তীকালে সিআইডির এসআই তারেক মাহমুদের পর এসআই বিমল মামলাটি তদন্ত করে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে নেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এসআই বিমল বদলি হয়ে গেলে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলীকে।
পরে শাহজাহান আলী ১০ মাস তদন্ত করেও মামলার অগ্রগতি কিংবা কোনো সাফল্যের মুখ দেখাতে পারেননি। এরই মধ্যে পরিদর্শক শাহজাহান রাজশাহীতে বদলি হওয়ায় আবারও মামলাটির তদন্ত দেওয়া হয় সিআইডির এসআই শহীদ উল্যাহকে।
এ দিকে, ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের তৎকালীন আরএমও অসীম কুমার সাহা ময়না তদন্ত রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। অপর দিকে ভিসেরা রিপোর্টেও বিষপানের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এরপর চট্টগ্রাম ফরেনসিক ল্যাবের সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক মো. নজরুল ইসলাম ওই তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে ভিসেরা রিপোর্টে উল্লেখ করেন।
নিহতদের পরিবারের দাবি, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত বছর নিহতদের ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পেলেও এর রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকারীকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
মামলার বাদী ও নিহত মুক্তার ভাই মাসুম দৈনিক অধিকারকে জানান, নুসরাত হত্যার বিচারের মতো তার বোন, ভাগিনা ও ভাগ্নির হত্যার দ্রুত বিচার চান তিনি। এই বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন মাসুম। এ সময় হত্যাকাণ্ডের তিন বছরেও এর ক্লু কিংবা আসামি ধরতে না পারায় ওই পরিবারে ক্ষোভ ও হতাশা পরিলক্ষিত হয়।
এ দিকে, নিহতের স্বামী তারেক আহাম্মদ জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার জন্য তিনি শুরু থেকেই সাইফুল ইসলাম ইমন ও আলম নামে দুইজনকে দায়ী করে নিজের ফেসবুকে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের গ্রেফতারে কোনো চেষ্টাই করছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে এসআই শহীদ উল্যাহ দৈনিক অধিকারকে জানান, তিনি মামলাটির দায়িত্ব পেয়েছেন মাত্র এক মাস আগে। এ সময় তিনি হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনের চেষ্টা করছেন বলেও উল্লেখ করেন।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড