এমডি অসিম, খুলনা প্রতিনিধি
এক সময় কক্সবাজার থেকে নদীপথে ক্রুড লবণ আসায় খুলনার রূপসা আর ভৈরব নদের তীরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেশ কয়েকটি লবণ মিল। ১৯৯৯-২০০৩ সাল পর্যন্ত যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩২টিতে উন্নীত হয়। বৃহত্তর পরিসরে দেশের প্রথম আয়োডিনযুক্ত লবণ কারখানা চালু হয় খুলনায়। যারা দেশের বাজার ছাড়াও বিদেশে লবণ রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিল। শিল্প নগরী খুলনায় বর্তমানে সে সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮টিতে। আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় নিম্নমানের লবণ চোরাই পথে প্রবেশের কারণে দেশি লবণ মার খাচ্ছে, মিলগুলোও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় লবণের দাপট এবং পুঁজি সংকটের কারণে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না খুলনার সম্ভাবনাময় লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। শেষে টিকে থাকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক মিল।
প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ইতোমধ্যেই খুলনার ২৪টি লবণ মিল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মিলগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। কোনো রকম চালু থাকা ৮টি মিলও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। খুলনা লবণ মিল মালিকদের অভিযোগ, চাহিদামতো ব্যাংক ঋণ না পাওয়া এবং ভারত থেকে চোরাই পথে লবণ আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা লবণ মিলের সাবেক শ্রমিক শাজাহান মিয়া বলেন, আগে লবণ মিলে কাজ করে ভালোই ছিলাম। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতাম, ঠিকমতো তিন বেলা খাবার জুটত। মিল বন্ধ হওয়ার পরে এখন ছেলেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করায়।
আ. ওহাব নামের আরেক শ্রমিক বলেন দীর্ঘদিন আগে থেকেই লবণ মিলে কাজ করতাম। অন্য কাজ তেমন একটা পারি না। মিল বন্ধ হওয়ায় অনেক দিন বেকার আছি। কী করব বুজে উঠতে পারছি না। অভাবের তাড়নায় স্ত্রী অন্যের বাড়ি কাজ করছে।
সাকিব নামের ১৬ বছরের এক যুবক বলেন, বাবা এক সময় লবণ মিলে কাজ করত, পরে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাবা বেকার হয়ে যায়। পরে আর আমার পড়ার খরচ দিতে পারে না। সে কারণে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে এখন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
রমনা সল্ট রিফাইনারি (প্রা) লি. চেয়ারম্যান নজির আহম্মদ লস্কর দৈনিক অধিকারকে বলেন, কক্সবাজার থেকে পরিবহন খরচ দিয়ে খুলনায় নিয়ে আসার পর ৭৬ কেজির এক বস্তা ক্রুড লবণের দাম পড়ে ৯শ থেকে ১১শ টাকা। সেখানে ৮২ কেজির এক বস্তা ভারতীয় লবণের দাম পড়ে মাত্র ৪৫০ টাকা। বস্তা প্রতি দামের এত হের-ফেরের কারণে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ও চায়না লবণ দেশে প্রবেশ করছে ফলে দেশি লবণের মার্কেট নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে অনেকে মিল বন্ধ করে দিয়েছে। যে আটটি চালু আছে সেগুলোও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
খুলনা লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি আনিল পোদ্দার দৈনিক অধিকারকে বলেন, চোরাই পথে লবণ আসা দ্রুত বন্ধ করার জন্য খুলনা লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বিসিক, বিজিপি ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে পত্র দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে অনেক বার আলোচনা ও করেছি, কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। আশা করি দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেবে সরকার।
খুলনা বিসিক-এর আঞ্চলিক পরিচালক মো. আবদুল বাসেত বলেন, প্রায়ই আয়োডিনবিহীন লবণ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। আর বর্ডার এরিয়াতে বিজিপিকে চিঠি দিয়ে জানানো আছে চোরাই পথে আসা লবণ খুলনার ভেতর যেন ঢুকতে না পারে। এখন আর চোরাই পথে লবণ আসছে বলে জানা নেই।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড