• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিনা মূল্যের ঘর পেতেও গুণতে হয় লাখ টাকা 

  সুমন খান, লালমনিরহাট

০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৫
ভূমিহীনদের ঘর
ভূমিহীনদের ঘর ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

লালমনিরহাটে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কাঠ, রড, বাঁশ ও বালু নিয়ে বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগীদের তালিকায় স্থান পেতে গুণতে হয়েছে হাজার হাজার টাকা। পাশাপাশি শ্রমিকদের খাওয়ার দায়িত্বও নিতে হয়েছে এই দুস্থ সুবিধাভোগীদের।

জেলায় প্রথম পর্যায়ে ২৭৫টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ এসেছে। যার নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। আরও নতুন ৩৩০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এসেছে। যার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুস্থ ও অসহায় ভূমিহীন (যার ৪ শতাংশ জমি আছে) পরিবার গুলোকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। ওই তালিকায় নাম তুলতে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-৪০ হাজার পর্যন্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে এলাকার বিত্তবান পরিবারের নামও তালিকায় উঠানো হচ্ছে।

জানা যায়, সুবিধাভোগীদের জন্য সামনে বারান্দাসহ দুই রুম বিশিষ্ট একটি ঘর, করিডোর, রান্নাঘর, টয়লেট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় জনপ্রতি ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা। এ প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নে আত্মীয়করণ ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের বিরুদ্ধে। এ তালিকায় চেয়ারম্যান তার চাচা আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া ও চাচি আফরোজা বেওয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মহেন্দ্রনগর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের চাচা সুবিধাভোগী আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া বলেন, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ারম্যাকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অন্যদের কাছে আরও বেশি টাকা নিয়েছে। ঘর নির্মাণ শুরু হলে কাজের বালু, রড, ছাউনির কাঠ, বাঁশ সরবরাহ করতে হয়েছে সুবিধাভোগীদের। এছাড়াও শ্রমিকদের দুই বেলা ভাত খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাদের। সরকারিভাবে শুধু ইট, টিন, সিমেন্ট ও শ্রমিক মজুরি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব না দিলে কাজ বন্ধ রাখা হয়।

সুবিধাভোগী আনোয়ার হোসেন বসুনিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, কাজ শুরু করেই বালু, রড, কাঠ দাবি করেন। না দিলে কাজ বন্ধ করে দেবেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে দুই এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এসব মালামাল সরবরাহ করেছি। নামে সরকারি ঘর, বাস্তবে এ ঘর পেতে প্রায় লাখ টাকা গুণতে হচ্ছে।

একই গ্রামের অপর সুবিধাভোগী আফরোজা বেওয়ার ছেলে বেসরকারি একটি ফার্মের প্রকৌশলী হলেও টাকা নিয়ে তার নাম দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন। এমনটাই জানান আফরোজা বেওয়া।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের ইট দিয়ে করা হচ্ছে ঘর। বারান্দা ও করিডোরে ইটের পিলার দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে জিআই তারের তৈরি করা বাজারের নিম্নমানের কেনা পিলার। দরজা জানালায় দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের কাঠ।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মহেন্দ্রনগর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপন বলেন, টাকার বিনিময়ে বা আত্মীকরণে নয়, মানবতার পরিচয় দিতে নামগুলো দেওয়া হয়েছে। কাজের অনিয়ম মনে হলে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন। যা করার তিনি করবেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মফিজুল ইসলাম জানান, বালু বা রড ইস্টিমেটে ধরা নেই, তাই সুবিধাভোগীদের কাছে নিতে পারে। তবে কাঠ, বাঁশ, কাজের বালু ও খাওয়ার খরচ নেওয়া ঠিক হয়নি। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার জানান, প্রথম পর্যায়ে ২৭৫টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ এসেছে। যার কাজ এখনো চলছে। পরে আরো নতুন ৩৩০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এসেছে। তবে সুবিধাভোগীদের কাছে কোনো কিছু সরবরাহ নেওয়াটা অন্যায়। ঘর নির্মাণে সব খরচ সরকার বহন করছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড