জিয়াউর রহমান, নেত্রকোণা
‘আমার কোনো সন্তান নাই। কেউ নাই আমার। তাই আমি এই বুড়া (বৃদ্ধ) বয়সেও ভিক্ষা করে কোনো রকম বেঁচে আছি। কিন্তু যেদিন ভিক্ষা করতে বের হতে পারি না- সেদিন আমাকে না খেয়ে থাকতে হয়। অসুখ হলে ঔষধ-বড়ি খাওয়ারও কোনো টাকা-পয়সা আমার নেই।’ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের দুঃখের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ১০ সন্তানের জননী বৃদ্ধা জরিনা বেগম।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরসভার টেংগুরী হরিয়ামালা গ্রামের মৃত মনছুর আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম। বর্তমান বয়স সত্তরেরও বেশি। দাম্পত্য জীবনে একে একে ৭ জন ছেলে ও ৩ জন কন্যা সন্তানের জন্মধাত্রী তিনি। দরিদ্র স্বামীর সংসারে অতি দুঃখ-কষ্টে সন্তানদের লালন পালন করেন জরিনা। স্বামী মনছুর আলী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর পূর্বে। ৩ মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। বিয়ে করেছেন ছেলেরাও। ছেলেরা বর্তমানে একেবারে সচ্ছল না হলেও সবাই উপার্জনশীল। যে যার মতো কর্ম করে ভালোই চালাচ্ছেন তাদের পৃথক পৃথক সংসার।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ে বেঁচে থাকলেও বৃদ্ধ মা জরিনা বেগমকে গত দুই বছর ধরে চলতে হচ্ছে মানুষের কাছে হাত পেতে। ভিক্ষা করে। ছেলেমেয়ে কিংবা ছেলেদের বউরা পাশাপাশি থাকলেও কেউ খোঁজ-খবর নেন না এই বৃদ্ধার। বরং বৃদ্ধ জরিনা ছেলেদের কাছে কিছু চাইলে বা বলতে গেলে তারা তারা মাকে প্রায়ই মারধরও করেন বলে প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, জীবদ্দশায় এসে জরিনা বেগমের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কোনো ভাতাও। অবশ্য মাথা গোঁজার কোনো ঘর না থাকায় এলাকার লোকজনের সহায়তায় কয়েকটি টিনের বেষ্টনী তৈরি করে কোনো রকম বসবাস করে আসছেন তিনি।
কল্যাণী হাসানকে কাছে পেয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন জরিনা বেগম
বিষয়টি নজরে এসে গত ৫ ডিসেম্বর সকালে অসহায় বৃদ্ধা জরিনা বেগমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আরিফুল ইসলাম সেলিম। ফেইসবুকে বৃদ্ধ জরিনার দুর্দশার খবর জানতে পেরে গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে বৃদ্ধার বাড়িতে ছুটে যান উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কল্যাণী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কল্যাণী হাসান। কল্যাণীকে কাছে পেয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন জরিনা বেগম। এ সময় কল্যাণী হাসান জরিনার ভরণপোষণের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করলে বৃদ্ধা জরিনা বেগমের মুখে যেন হাসি ফুটে।
এ বিষয়ে কল্যাণী হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধা জরিনা বেগমের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব নিতে চাই। তিনি ইচ্ছে করলে আমার বাড়িতেও থাকতে পারেন কিংবা যদি তিনি নিজ গ্রামে থাকতে চান তাহলে সেখানে রেখেই তাকে আমি ভরণপোষণ করব। তবে অদ্যাবধি অসহায় জরিনার ভাগ্যে বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কোনো কার্ড না জোটার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক জানিয়ে এ নিয়ে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমানের সাথে কথা বলেছেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখেছি বৃদ্ধা জরিনা বেগমের নামে কোনো রকম ভাতার কার্ড হয়নি। আমরা দ্রুত জরিনাকে ভাতার কার্ড প্রদান করব।
ওডি/আরবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড