• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লোহাগড়া মুক্ত দিবস আজ

  শিমুল হাসান, নড়াইল

০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:২৩
নড়াইল
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নড়াইলের লোহাগড়া থানা হানাদার মুক্ত দিবস আজ ৮ ডিসেম্বর। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পতাকা উত্তোলন, র‌্যালি, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও শহীদদের কবর জিয়ারতের আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের এ দিনে ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে লোহাগড়ার মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানাকে পাক হানাদার মুক্ত করেন। স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত লোহাগড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়া ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে। মধ্য নভেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা সমগ্র উত্তর অঞ্চল শত্রুমুক্ত করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার লক্ষীপাশায় অবস্থিত থানা আক্রমণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

৮ ডিসেম্বর ফজরের আজানের পর ভোর ৫টার দিকে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী, থানা মুজিব বাহিনীর প্রধান সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ খসরুজ্জামান, আবুল হোসেন খোকন ও কবির হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গেরিলা কায়দায় পশ্চিম দিক দিয়ে থানা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়ে পাক বাহিনীর রেঞ্জার সদস্যরা।

এ সময় থানায় অবস্থানরত রেঞ্জার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র গোলা বারুদ ফেলে থানার পূর্ব দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পাক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ। ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধ চলাকালে থানা অভ্যন্তরের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন কোলা গ্রামের হাবিবুর রহমান ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গল-বাঁধাল গ্রামের মোস্তফা কামাল।

উল্লেখ্য, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানা চত্বরে কবর দেওয়া হয় আর মোস্তফা কামালকে ইতনা স্কুল চত্বরে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে তৎকালীন থানার ওসি সিরাজুল ইসলামসহ সুধী মহলের সহযোগিতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের কবরটি টাইলস দিয়ে বাঁধানো হয়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবরটি ইতনা স্কুল চত্বরে রয়েছে। থানা আক্রমণের সময় মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে কুখ্যাত রাজাকার ও পুলিশ সদস্য খালেক ও নড়াইলের আশরাফ রাজাকারসহ প্রায় ২০ জন মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে গ্রেফতার হয় ১০ জন পুলিশসহ ২২ জন রাজাকার।

মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে নিজেদের আয়ত্তে আনেন। পড়ে সকাল ৯টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ইউনুস আলী থানায় স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দেন। থানা হানাদার মুক্ত হওয়ার খবরে উল্লসিত মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দ মিছিল করে রাস্তায় নেমে আসে। এরপর ৮ ডিসেম্বর সারাদিনই লোহাগড়া থানার বিভিন্ন এলাকায় জনতা বিজয় মিছিল করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শামসুল আলম কচি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়ায় ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাঁদের স্মরণে এখন পর্যন্ত এখানে নির্মিত হয়নি কোনো সৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ। লোহাগড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) শেখ আ. হান্নান লোহাগড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তিনি জানান, মুক্ত দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পতাকা উত্তোলন, র‌্যালি, আলোচনাসভা, দোয়া মাহফিল ও শহীদদের কবর জিয়ারত এর আয়োজন করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত লোহাগড়া আজও অরক্ষিত ও অবহেলিত।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড