মনির জামান, নন্দীগ্রাম, বগুড়া
পাঁপড় বাংলার ঐতিহ্যের একটি আদি শিল্প। মেলা ও বিভিন্ন পার্বণে এখনো জড়িয়ে আছে এই খাবারটি। ‘পাঁপড়’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন লোক খুজে পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। অধিকাংশ লোকই খাবারের বিভিন্ন উপকরণের সঙ্গে পাঁপড় খেতে ভালোবাসেন। ঈদ, মেলা, পূজা ও বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলাতে এই পাঁপড়ের জুড়ি নাই।
আর যাদের জীবন-জীবিকা এই পাঁপড় শিল্পের ওপর নির্ভরশীল এমন একটি জায়গা হচ্ছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার গুন্দইল গ্রাম। কম পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় গুন্দইল গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী পাঁপড় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এই পাঁপড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জীবন-জীবিকা এই পাপড়ের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। এই ব্যবসায় পুঁজির প্রয়োজন হয় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। অল্প পুঁজিতে লাভজনক এ ব্যবসা। এক কেজি ময়দায় ৬৫ পিস পাঁপড় হয়। প্রতিটি পাঁপড়ের উৎপাদন খরচ ১ থেকে ২ টাকা। বিক্রি মূল্য ৫ টাকায়।
১৫ বছর ধরে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গৌর চন্দ্র (৫৫) জানান, পাঁপড় তৈরি করতে প্রথমে একটি বড় পাত্রে ময়দা নিয়ে এর সঙ্গে পরিমাণ মতো লবণ, কালোজিরা, খাওয়ার সোডা, বেসন ও খাবারের রং ভালোভাবে মেশাতে হবে। এরপর হাঁড়িতে পানি দিয়ে চুলা জ্বালাতে হবে। পানি ফুটে উঠলে হাঁড়ির ওপর একটা স্টিলের প্লেট বসিয়ে তাতে এক চামচ মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে প্লেটটি ঘুরিয়ে মিশ্রণটুকু পাপড়ের আকারে গোল করতে হবে। কিছুক্ষণ পর পাঁপড়টি ভাপে সেদ্ধ হলে নামিয়ে রোদে শুকাতে হবে। তারপর সেগুলো ভেজে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, পাঁপড় তৈরি করতে বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। ২-৩ দিন প্রশিক্ষণ নিয়েই পাঁপড় তৈরি করা যায়। পাঁপড় তৈরি করেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে শিখে নেওয়া যেতে পারে।
পাঁপড় মচমচে ও মুখরোচক খাবার বিধায় সববয়সী মানুষই পাঁপড় খেতে পছন্দ করেন। লোকসমাগম বেশি, এমন স্থানে এর ব্যবসা ভালো চলে। বর্তমানে অধিকাংশ দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ শিল্প মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই শিল্পর সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার কারণে অন্য কোনো কাজ শিখতে পারেনি গুন্দইল গ্রামে পাঁপড় তৈরির কারিগররা। ফলে এ কাজই করতেই হয় তাদেরকে। তবে পাঁপড় তৈরি করেই পরিবারের ভরণপোষণ চালাচ্ছেন তারা। বছরের ভাদ্র থেকে মাঘ এই ৬ মাস এর চাহিদা থাকে বেশি। আর বর্ষায় এটা তৈরি করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কারণ পাঁপড় তৈরির পর তা রোদে শুকাতে হয়।
বর্তমানে বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও নাটোরসহ আশপাশের জেলা থেকে নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার গুন্দইল গ্রামে পাঁপড় ক্রয় করতে আসেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। গুন্দইল গ্রামের অর্ধশত পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পাঁপড় শিল্পের সঙ্গে তাদের ভাগ্য জড়িত। পাঁপড় শিল্পের আরও অগ্রসর হওয়ার জন্য সুদমুক্ত সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরও অগ্রগতি হবে বলে জানিয়েছেন এই পাঁপড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গুন্দইলবাসী।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, গুন্দইল গ্রামটি পৌরসভার আওতায় হওয়ায় আমরা তাদের ভিজিডি সুবিধা দিতে পারছি না। তবে তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি এবং যারা অষ্টম শ্রেণি পাশ তাদের জন্য অচিরেই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। যাতে করে তারা নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারেন।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড