• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মামলাতেই থেমে গেল মাধবদী পৌরসভার উন্নয়ন কাজ 

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:১৪
উন্নয়ন কাজ
বাড়ির দেয়ালের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া উন্নয়ন কাজ ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পূর্বপাশে গড়ে উঠা নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা। নরসিংদী জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্রস্থল মাধবদী বাজারের অবস্থান। এখানে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক- বিমা অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক দপ্তর।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাধবদী এলাকায় নিত্যদিন হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে ব্যস্ততম এ শিল্প সমৃদ্ধ জনপদ। মাধবদী বাজারে প্রবেশের একাধিক রাস্তা থাকলেও বাজার থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে পৌরসভায় আসার মূল প্রবেশ পথ দুটি। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাজারে প্রবেশের জন্য যে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত সরু হওয়ায় প্রতিনিয়ত এখানে যানযটের সৃষ্টি হয়। ফলে স্কুল, কলেজ ও ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে বিগত দিনগুলোতে জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করলেও কেউ বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, মাধবদী পৌরসভা ও এর আশপাশে গড়ে উঠা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোসহ স্কুল- কলেজ, মসজিদ-মাদরাসায় যাতায়াতের জন্য মাধবদী পৌরসভার সামনে থেকে ম্যানচেষ্টার চত্ত্বর হয়ে সাবেক রেলস্টেশন পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ রাস্তাটি প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সে রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান। এ উদ্যোগকে স্থানীরা স্বাগত জানালেও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাধবদী পৌরসভার সাবেক মেয়র।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী সফিউদ্দিন আহমেদ আদালতে মামলা করে রাস্তাটির উন্নয়ন কাজে দেয়াল তৈরি করে দিয়েছেন। ওই মামলার কারণে থমকে গেছে মাধবদী পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার চলমান উন্নয়ন কাজ।

স্থানীয়রা বলছেন, হাজী সফিউদ্দিন আহমেদ বিগত সময়ে এ পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তিনি এ রাস্তাটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। আমরা যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করি তারা একাধিকবার অভিযোগসহ দাবি তুলেছিলাম কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেনি। তিনি বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি না হওয়ার জন্য মামলা করেছেন।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, মাধবদী বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান সড়কটি উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে চরম বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ট্রাক, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের দৌরাত্ম্যের কারণে সাধারণ মানুষসহ স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা অনিরাপদভাবে চলাচল করছে।

১৯৯৪ সালে নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। সাড়ে ৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার বর্তমান পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন হাজী মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক।

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই গত সাড়ে তিন বছরে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন বলে দাবি করেন স্থানীয় ইউনুস হাজী। তিনি জানান, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। সে উন্নয়ন কাজে মামলা ঠুকে দিয়ে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছেন সাবেক পৌর মেয়র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবসায়ীরা জানায়, সাবেক পৌর মেয়র হাজী সফিউদ্দিন আহমেদের দায়ের করা মামলায় উন্নয়ন কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এমন জনবিরোধী কাজ তিনি করবেন এমনটা আমরা তার কাছ থেকে আশা করিনি।

দৈনিক অধিকারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাধবদী পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক জানান, একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে মাধবদীকে গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে সাধারণ মানুষের সেবক হিসেবে মাধবদী পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিগত সাড়ে ৩ বছর সময়ের মধ্যে পৌরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে প্রায় ১শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের মধ্যে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১০ ভাগ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব কাজের বেশিরভাগই হচ্ছে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়নে মাধবদী পৌরসভাকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ফায়ার সার্ভিস থেকে ম্যানচেষ্টার চত্ত্বর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত মাধবদী বাজারের ভেতর দিয়ে যে রাস্তাটির কাজ চলমান ছিল তা গত নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্প্রতি সাবেক পৌর মেয়রের মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পৌর মেয়র হাজী সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি উন্নয়ন কাজে বিশ্বাসী তবে এ উন্নয়নে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে জমি নিয়ে হবে।

মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে যাতে আমার বিল্ডিং না ভাঙতে পারে আমি সে জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। উন্নয়নের জন্য যদি আমার বাড়ি ভেঙে জমি দিতে হয় তাহলে ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে আমি তা দিতে রাজি আছি। ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে বাড়ি ভেঙে দিতে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে আমাকে কোনো প্রকার নোটিশ দেওয়া হয়নি।

মাধবদী পৌরসভার প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। মাত্র ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ের জন্য আদালতে রিটের কারণে বাজারের প্রধান সড়কটি বন্ধ থাকায় মাধবদীর সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা আজ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড