• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বড়পুকুরিয়া কয়লা ট্রাজেডি

  শাফিউল কায়েস

২৪ জুলাই ২০১৮, ১৯:১৬
ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি চলছে কয়লা গায়েবের গল্প৷ কয়লা হারিয়ে কোথায় গেলো? কীভাবে উধাও হলো? কারা জড়িত? না কয়লা আপন মনে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে বেরিয়েছে; সময় হলে না হয় ঘরে ফিরবে৷ যাই হোক আর যে ভাবেই হোক কয়লা অদৃশ্য হয়ে গেছে এটা সত্য৷

দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত ৯নং হামিদপুর ইউনিয়নে ভবানীপুর বাজার হইতে দক্ষিণে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি অবস্থিত ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি নাম সকলের জানা সেটি হচ্ছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি৷ এটি ১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত হয়। কয়লা খনিটি ৬ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। মজুদের পরিমাণ প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এখানে সবচেয়ে দামি বিটুমিনাস কয়লা উত্তোলন করা হয়। এই কয়লা খনি থেকে বার্ষিক ১০ লক্ষ মেট্রিক টন বিটুমিনাস কয়লা উৎপাদন করা হয়। বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রকল্প ব্যয় ২৫১ দশমিক ০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা দ্বারা খনি সংলগ্ন স্থানে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়৷ সেখানে উত্তোলিত কয়লা দ্বারা ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে।

গত ১৩-১৪ অর্থ বছরে এই খনি থেকে ৯৩৩০০০ মেট্রিক টন বিটুমিনাস কয়লা উত্তোলিত হয় এবং সেগুলো বিক্রয় করে ৮৯৮ কোটি টাকা আয় হয়। আয়কৃত টাকা থেকে ৩০২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়। উত্তোলিত কয়লা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যোগান দেওয়ার পর স্থানীয় বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বিক্রয় করা হয়। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে প্রায় দুইশত'র অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

১৬ জুলাই রোজ সোমবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য আবু সাঈদ কয়লা খনি এলাকা পরিদর্শনে আসার পর কয়লা গায়েব হওয়ার কথা প্রথম সকলের সামনে চলে আসে। এর পর কথা মুখ কান হলে সারা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে এই কয়লা গায়েব হওয়ার কথা।

কয়লা খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ গত বছর এপ্রিল মাসে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানি সেক্রেটারি ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করে সিরাজগঞ্জে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে।

আর সাময়িক বরখাস্ত কর্মকর্তারা: আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) ও খালেদুল ইসলাম উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর)।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে। যার বর্তমান বাজার মূল্যে এই কয়লার দাম প্রায় ২২৭ কোটি টাকার উপরে।

কয়লার হাত হয়েছে, কয়লার পা হয়েছে, কয়লা ঘুরতে বেরিয়েছে সন্ধ্যা হলে ঘরে ফিরবে৷ নয়তো কয়লাকে অন্য কেউ স্থানচ্যুত করে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে৷ আর কয়লার যদি হাত পা না থাকে তাহলে সেগুলোকে কোন না কোন পরিবহনে করে স্থানান্তরিত করা হয়েছে৷ কে বা কারা করছে এই কাজ? তদন্ত চলছে চলবে, ফলাফল শূন্য না হলেও কিছু সংখ্যা পাওয়া যাবে কিন্তু একটু দেরি হতে পারে৷ পরিবহন ব্যবহার করেই কয়লা স্থানান্তরিত করা হয়ে এটা নিশ্চিত।

যদি পরিবহন ট্রাক ব্যবহার করা হয়ে থাকে,তাহলে এক ট্রাকে কতগুলো কয়লা ধরবে? ছয় চাকার চার এক্সেল গাড়িতে ১৫ টন বা ১৬ টন পণ্য বহনের সক্ষমতা রয়েছে ব্লু-বুক অনুযায়ী। ২০ টন পণ্য বহনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তা আরও বাড়ালে নিশ্চিতভাবেই সড়কের ক্ষতি হবে। ১০ চাকার গাড়ির পণ্য বহন ক্ষমতা ২৬ টন।

প্রাইম মুভারের ক্ষেত্রে চার এক্সেলের গাড়ি হলে ৩৩ টন, পাঁচ এক্সেলের হলে ৪২ টন পণ্য বহন করতে পারে। এর বেশি পণ্য বহন করলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি একটা হিসাবের জন্য ধরে নিলাম একটা ট্রাকের সর্বোচ্চ পরিবহন ক্ষমতা ৫০ টন৷ তাহলে ১লক্ষ ৪২ হাজার টন কয়লা পরিবহনের জন্য প্রয়োজন কত? কয়লাগুলো স্থানান্তরিত করে বেশি না ২৮৪ টি ট্রাক প্রয়োজন৷ কয়লা খনি এবং সংরক্ষণ ডিপোকে কেন্দ্র করেও রয়েছে ‘কঠোর নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা। অথচ কেউ কিছু জানালো না, কারো নজরো কাড়লো না৷

কয়লা গায়েবের ঘটনাটি তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্ল্যানিং) আইয়ুব খান চৌধুরীকে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে বিসিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অতি তাড়াতাড়ি ঘরের কয়লা সন্ধ্যা হওয়ার আগে ঘরে ফিরেব৷ আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি উত্তোলন করে রাখা এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় জ্বালানি সংকটে পড়েছে পাশে গড়ে উঠা কয়লা চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। কয়লা গায়েবের পর পর্যাপ্ত কয়লা না থাকায় যে কোনো সময় ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ইতোমধ্যে কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট বন্ধ রায়েছে৷ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার অপর ইউনিটটি বর্তমানে সীমিত ক্ষমতায় চালিয়ে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে এটিও বন্ধ হতে পারে৷ ফলে দুর্ভোগে পড়বে উত্তর অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা৷

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড