• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নতুন মূলকাটা পেঁয়াজ উঠলেও কমেনি দামের ঝাঁজ

  পাবনা প্রতিনিধি

০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:২৯
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত পাবনার হাট বাজারে পেঁয়াজের অভাব। তাই অপক্ব পেঁয়াজ থেকে শুরু থেকে পেঁয়াজের কাণ্ড-পাতা, ফুল সবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমে ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে শিলা বৃষ্টির কারণে কৃষকের অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় বলে মনে করছেন চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা। সীমিত পরিমাণ মূলকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠলেও তা ক্রেতাদের পূরণ করতে পারছেনা। কাজেই অন্তত আরও এক সপ্তাহের আগে পেঁয়াজের দরে কোনো সুখবর নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ও পেঁয়াজ চাষিরা।

বৃহস্পতিবার(৫ ডিসেম্বর) পাবনা শহরে নতুন পেঁয়াজ খুচরা ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গত দুইদিন পাবনার বড় হাট সুজানগর ও বনগ্রামে হাটে নতুন পেঁয়াজ খুচরা ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা ও পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা কেজি দরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজাহার আলী জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। গত বছর জেলার ৯ উপজেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধুমাত্র সুজানগর উপজেলাতেই উৎপাদন হয় প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। অবশ্য এবারেও প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সুজানগর ও সাঁথিয়ার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ না পেয়ে ব্যাপারীরা ফিরে যাচ্ছেন। ব্যাপারী নজরুল ইসলাম জানান, বনগ্রাম হাটে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবারে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয় এবং তিনি নিজে ৩ ট্রাক করে পেঁয়াজ কিনে রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানে নিয়ে যান। কিন্তু এখন আড়তে পেঁয়াজ না থাকায় মাত্র ২০ মণ পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার নতুন পেঁয়াজ ছয় হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার এবং পুরাতন পেঁয়াজ প্রতি মণ ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকায় কিনেছেন।

সাঁথিয়ার বৃহৎ সুজানগর হাটেও দেখা যায় একই চিত্র। হাটের এক ব্যাপারী সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সকাল থেকে বসে আছি। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। সামান্য কয়েক মণ মূলকটা পেঁয়াজ এনেছিল কৃষকরা। কয়েকজন ভাগ করে নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের দাম ওঠা নামা করায় তারা লোকসানের মুখে পড়বেন।

সুজানগর পৌর মেয়র ও ভায়না গ্রামের বড় পেঁয়াজ চাষি আব্দুল ওহাব বলেন, তারও ১২০০ মণ পেঁয়াজের মধ্যে ৬০০ মণ পেঁয়াজ পচে গেছে। তিনি বলেন, সুজানগর পেঁয়াজ হাটে এখন পেঁয়াজ নেই। বাস্তবতা বিবেচনা করে হাটের খাজনা নেয়া নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে এ অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের হালি পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে বাজার স্বাভাবিক রাখে মূল কাটা পেঁয়াজ। কিন্তু এবারেও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে টানা বৃষ্টির কারণে মূল কাটা পেঁয়াজ তারা নাবিতে রোপণ করেন। প্রতি বছর এ সময়ে বাজারে মূলকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এ জন্য দামও স্বাভাবিক থাকে।

কিন্তু এবারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নাবি হয়েছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মূল কাটা পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নাবিতে লাগানো মূলকাটা পেঁয়াজ নিয়েও শঙ্কিত এখানকার কৃষক।

সুজানগর উপজেলার গোপালনপরের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, উচ্চ দামে বীজ কিনে তিনি ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। এতে প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। মূলকাটা পেঁয়াজ ওঠার পর দাম কমে গেলে তার বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হবে। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

চাষিরা আরও জানান, আগাম এই পেঁয়াজ চাষ করে কৃষক একদিকে যেমন লাভবান হন, অন্য দিকে এই পেঁয়াজ বাজারের ভারসাম্যও রক্ষা করে থাকে। কিন্তু এবারে সে সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে। সুজানগরের চাষিরা জানান, পদ্মায় আকস্মিক পানি বেড়ে জমি জলমগ্ন হয়ে কৃষককে প্রথম দফায় ক্ষতির মুখে ফেলে। এরপর ২ সপ্তাহের মধ্যে জমিতে জোয়ার আসায় অনেক কৃষকই মাঠের জমি প্রস্তুত করে পেঁয়াজ রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। অনেকে রোপনও করেছিলেন। কিন্তু গত ২৩ অক্টোবর থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে রোপণকৃত পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে যায়। পচন ধরে রোপণকৃত পেঁয়াজে। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন কৃষক।

সুজানগর উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, আগে যেখানে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হতো, এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে আধুনিক চাষাবাদ করায় বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ পেয়াজ উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর এই উপজেলার কৃষকরা মূলকাটা পেঁয়াজ রোপণের পর নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ থেকে আবার জমি থেকে তুলে বিক্রি করেন। এ বছর সুজানগর উপজেলায় নতুন মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু অসময়ে হঠাৎ করে টানা বৃষ্টিতে জমিতে রোপণকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ও পেঁয়াজ রোপণের জন্য প্রস্তুতকৃত অনেক জমিতে পানি জমে যাওয়ায় এবারে নাবিতে মূলকাটা পেঁয়াজ রোপণ করেন। কাজেই আরও এক সপ্তাহ পরে আশা করছি মূলকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। কাজেই শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, আগামী এক সপ্তাহর মধ্যে মূলকাটা পেঁয়াজ পুরাপুরি বাজারে উঠবে। এতে দাম স্বাভাবিক হবে বলে তিনি জানান।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড