• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজও স্বীকৃতি পাননি মুক্তিযোদ্ধা এফাজ উল্লাহ

  শাহ মুহাম্মদ রুবেল, কক্সবাজার

০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৪৭
বীর মুক্তিযোদ্ধা
বীর মুক্তিযোদ্ধা এফাজ উল্লাহ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৯ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে আজ। এই যুদ্ধে অংশ নিয়ে অনেকেই শহীদ হয়েছেন আবার অনেকে এখনো জীবিত রয়েছেন। জীবিতদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হলেও আজও সেই স্বীকৃতি পায়নি কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া গ্রামের এফাজ উল্লাহ নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বীকৃতি না পাওয়ায় তার পরিবারসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, সেই সময়ের যুবক এফাজ উল্লাহ আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ এর ২৭ মার্চ থেকে ২ মে পর্যন্ত জয় বাংলা বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে তৎকালীন কমান্ডার কামাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি স্কুল মাঠে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এফাজ উল্লাহ। প্রশিক্ষণ নিয়েই চট্টগ্রাম ১ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন কক্সবাজারের রণাঙ্গনে একাধিক অপারেশনে অংশ নেন তিনি। ওই সময় কক্সবাজার এয়ারপোর্ট দখল মিশনে গর্বিত সদস্য হয়ে পাকহানাদার বাহিনীর ১১ জন ইপিআর সদস্যকে আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয় কামাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে থাকা মুক্তিবাহিনী।

জীবনের মায়া ভুলে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে এফাজ উল্লাহ ছিলেন একজন অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক, থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কারণে পাকবাহিনী তার বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তার ঘরসহ মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। দেশকে স্বাধীন করতে অপ্রতিরোধ্য ভাবে চালিয়ে গেছেন যুদ্ধ। পাকিস্তানিদের পতাকা নামিয়ে লাল-সবুজের পতাকা উড়ানো ছিল তার দীপ্ত শপথ। সেই শপথে বলিয়ান হয়ে পাক হানাদারদের ঘুম হারাম করেছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এফাজ উল্লাহ।

দীর্ঘ ৫ মাস কারাভোগের পর তার বিরুদ্ধে গুলির অর্ডার হয়। তখন অন্যান্য বন্দি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এফাজ উল্লাহকেও কক্সবাজার শহরের রেস্ট হাউজের পাশে চোখ বেঁধে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। এরপর আবারও যুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আহতও হন। যার দাগ শরীরে এখনো রয়েছে। এই আঘাতের চিহ্নগুলো এখনো তাড়া করে তাকে।

দেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই ছিল এফাজ উল্লাহর স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে উঠছে সুখী-সমৃদ্ধির সোনার বাংলাদেশ। বর্তমানে তার বয়স ৬৫। কিন্তু এখনো তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পাননি। দেশ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পাওয়ার ব্যথায় প্রতিনিয়ত তাকে ব্যথিত করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রম সম্পর্কেও অবগত ছিলেন না তিনি। যার জন্য বিলম্ব হয়ে যায় আবেদন করতে। বর্তমানে তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি বরাবর আবেদনও করেছেন। এছাড়া ‘জয় বাংলা বাহিনী ৭১’ এর প্রধান ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব, মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কালাশু বড়ুয়া, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল আলম চৌধুরী ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলার কমান্ডার ডা. শামশুল হুদাও এই এফাজ উল্লাহ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও ৭১ এর বীর সেনানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। এ অবস্থায় তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করতে সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার পরিবার।

‘জয় বাংলা বাহিনী ৭১’ এর প্রধান ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা এফাজ উল্লাহ মার খেয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন, পাঁচ মাস কারাভোগ করেছেন। পাকবাহিনী তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরপরেও এফাজ উল্লাহর জীবন থেমে থাকেনি। তিনি পাকবাহিনীর গুলির মুখ থেকে বেঁচে যান। যুদ্ধে অংশ নেওয়া এফাজ উল্লাহ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় অত্যন্ত বেদনাহত তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় এফাজ উল্লাহ ছিলেন আমার সহপাঠী বীর যোদ্ধা। তিনি ছিলেন খুব সাহসী ও কর্মঠ। কখনো তিনি পিছু হটেননি। তাই আমি তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করছি।

ভাগ্যহত মুক্তিযোদ্ধা এফাজ উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে একাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। কমান্ডার কামাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিভিন্ন মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। ওই সময় জীবনের কোনো ভয় ছিল না। স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হবে। গড়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ সোনার বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর তাই হলো। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু এখনো আমি রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানটুকু পেলাম না। আমার নানা সুবিধার প্রয়োজন নেই। মৃত্যুর আগে যেন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নিয়ে মরতে পারি, এটাই আমার শেষ চাওয়া।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড