আবু তাহের, চট্টগ্রাম
সারা দেশের ন্যায় সুলভ মূল্যে ভোক্তাদের নিকট পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবির ডিলাররা। গাড়িতে করে টিসিবির প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। তবে, এসব স্থানগুলোর প্রতিটিতেই দেখা গেছে পচা পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা। এতে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলেও ২শ টাকার পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় কিনতে পেরে অনেক ক্রেতাদের মধ্যেই কিছুটা স্বস্তি পরিলক্ষিত হয়েছে।
এ দিকে, টিসিবির এসব পেঁয়াজ বিক্রির স্পটগুলো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার থানার আশপাশে হলেও এর বাইরেও দু-একটা স্পটে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ সিজিও বিল্ডিংয়ের সামনে টিসিবির ডিলার ইউসুফ স্টোরের একটি ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায় অনেক ক্রেতাদের। এখানে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক দুইটি লাইনে পেঁয়াজ ক্রয়ের জন্য ভিড় লক্ষ করা যায় ক্রেতাদের।
তবে পুরুষদের লাইনে থাকা কয়েকজন ক্রেতার অভিযোগ, দীর্ঘ সময় লাইনে থাকার পরও এক কেজির বেশি পেঁয়াজ মিলে না। তারা বলেন, এক কেজিতে পেঁয়াজ ধরে মাত্র সাত থেকে আটটা। এর মধ্যে একটা বা দুইটা পচা ও নষ্ট পেঁয়াজ থাকলে ন্যায্য বা কম মূল্য হলো কোথায়? এ সময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে পণ্য নিয়ে ঠকলে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ হওয়া স্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এ ব্যাপারে ওই স্পটের পেঁয়াজ বিক্রেতা ও টিসিবির ডিলার ইউসুফ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ জানান, ‘আমরা এক টন পেঁয়াজ বিক্রি করছি এই গাড়িতে। এগুলো তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ। সাইজেও কিছুটা বড়। এক কেজিতে সাত থেকে আটটির বেশি পেঁয়াজ ওঠে না। টিসিবি আমাদের যেভাবে বস্তাসহ দিচ্ছে আমরা সরাসরি সেটাই ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। বেছে বেছে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গেলে লোকসান গুণতে হবে ডিলারকেই। তাই আমরা যেভাবে পেয়েছি সেভাবেই ক্রেতাদের দিচ্ছি।’
পচা ও নষ্ট পেঁয়াজের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এতে আমাদের করার কিছুই নেই। তারপরও আমরা দেখেশুনে পেঁয়াজ দিচ্ছি, একজন গ্রাহকের কাছে যাতে একাধিক নষ্ট বা পচা পেঁয়াজ না যায়। কারণ, এত কষ্ট করে পেঁয়াজ কেনার পর সেটা যদি পচা ও নষ্ট হয় তাহলে ক্রেতাদের খারাপ লাগারই কথা।
এ সময় পচা পেঁয়াজ বদলে দেওয়ার জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে ঝগড়ার কথা উল্লেখ করে টিসিবির এই ডিলার বলেন, আমরা তো টিসিবির সঙ্গে ঝগড়া করতে পারছি না। আর প্রকৃত অর্থে টিসিবিরও পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা যেভাবে বিদেশ থেকে আসছে, সেভাবেই বস্তাসহ ডিলারদের দিয়ে দিচ্ছে এসব পেঁয়াজ। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের দেখেশুনে একটু ভালো পেঁয়াজগুলো দিতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন আহমেদ দৈনিক অধিকারকে জানান, এ পেঁয়াজগুলো মাত্র তিন দিন আগে ফ্রিজিং কন্টেইনার জাহাজে করে এসেছে। আমরা গুদামে এনেই পেঁয়াজগুলো ডিলারদের দিয়ে দিচ্ছি। যেহেতু পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য তাই ৪৫ কেজির বস্তায় দুই থেকে চারটা পেঁয়াজ পচা থাকতেই পারে। তবে আমরা ডিলারদের নির্দেশনা দিয়েছি ভোক্তাদের যাতে বেশি পচা পেঁয়াজ না দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, খোলা বাজারে টিটিবির পেঁয়াজ বিক্রির প্রতিটি স্পটে আমরা ডিলারদের মনিটরিং করছি। আর এখন তো পেঁয়াজ গুদামে থাকছেই না। বিদেশ থেকে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুই-একদিনের মধ্যে আমরা এগুলো ডিলারদের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করছি। সুতরাং পেঁয়াজ পচার সুযোগ অনেক কম। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেগুলোকে পচা পেঁয়াজ বলা হচ্ছে সেগুলো আসলে পচা না। এসব পেঁয়াজ দুই ঘণ্টা রোদে শুকালে সেগুলো একদম তাজা ও ঠনঠনে হয়ে যায়। তারপরও গ্রাহকদের কথাটা আমাদের চিন্তায় রয়েছে। সেই কারণেই আমরা ডিলারদের সেভাবে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি, যাতে গ্রাহক না ঠকে।
টিসিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত ভোক্তা বা গ্রাহক পর্যায়ে সেরকম কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। তবুও কোথাও উত্থাপিত হয়ে থাকলে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
ওডি/আইএইচএন
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন সজীব
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
ফোন: ০২-৯১১০৫৮৪
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড