রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুর
এক সময়ের ইটভাটা শ্রমিক এখন কোটিপতি! ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পদে আসার পর থেকেই তার লুটপাট শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে। তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি আর এলাকায় দখলবাজিতে মেতে উঠেছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ওরফে দুধার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, চেয়ারম্যানের সকল অপকর্মের প্রধান সহযোগী তার ছেলে আমিরুল ইসলাম জুয়েল, স্ত্রী নুরজাহান বেগম এবং বড় ভাই গোলাম মাওলা। ক্ষমতার দাপট আর বিভিন্নভাবে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে কুশাখালী ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে চেয়ারম্যানের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েও মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়দের অনেকে।
তবে সম্প্রতি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এতে স্থানীয়দের পক্ষে কুশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এইচ এম এ খালেক ও মোশারেফ হোসেনসহ ৮ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য লক্ষ্মীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সরকারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরে নুরুল আমিন প্রায় দেড় হাজার শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। স্ত্রী-ছেলের নামেও তিনি প্রায় ৩০০ শতাংশ জমি কিনেছেন। ইউনিয়নের শান্তির হাট বাজারে সরকারি জমিতে তিনি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে দোকানভাড়া দিয়ে তা নিজেই ভোগ করছেন। কিন্তু কয়েক বছর আগেও সেখানে মাছ বাজারের শেড ছিল। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সরকারি জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সরকারি রাস্তার পাশের শত শত গাছ কেটে নিয়েছেন। বিনামূল্যে সরকারি বরাদ্দে গভীর নলকূপ স্থাপনে মানুষের কাছ থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। হতদরিদ্র নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ও বিধবাসহ সব সরকারি ভাতার কার্ড দিতে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩-৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এতে সহায়তা করে আসছেন তার স্ত্রী। আবার ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে গ্রাহকের টাকা নিজেই উত্তোলন করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, চেয়ারম্যানের ছেলে জুয়েল পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে ৬-৭ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এতে সরকারের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্প ব্যাহত হচ্ছে। জুয়েলের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্ধে বিনামূল্যে ঘরের জন্য ৫০ জনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনকালীন ১০ লাখ টাকার সম্পত্তির হিসেব দেখালেও বর্তমানে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যানের অপকর্মে বাধা দিলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য অজি উল্যাকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। অথচ প্রায় ১৮ বছর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন এই নেতা। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে নিজে চেয়ারম্যান হতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাদের মেম্বার বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিন উদ্দিন এখনো তার ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ফিরে পাননি। মেম্বারও হতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৬ এর আগে নুরুল আমিন ইটভটার শ্রমিক ছিলেন। জীবিকার তাগিদে হালচাষও করেছেন। কয়েকবার ইউপি নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হয়েও জয়ী হতে পারেননি। পরবর্তীকালে অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার বিনিময়ে প্রার্থিতা পেয়ে জোর করে বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এ দিকে অভিযোগ অস্বীকার করে কুশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অভিযোগে উল্লেখ করা জমির পরিমাণ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো একটি প্রমাণ পেলেও তিনি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেবেন বলেও চ্যালেঞ্জ করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ লক্ষ্মীপুরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফিউজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ‘চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড