• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রতিবন্ধী শিক্ষকের প্রাণবন্ত পাঠদানে আকৃষ্ট শিক্ষার্থীরা 

  বগুড়া প্রতিনিধি

২৫ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৪৭
প্রতিবন্ধী জুলফিকার
শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিচ্ছেন প্রতিবন্ধী জুলফিকার ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় এক শারীরিক প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষকের প্রাণবন্ত পাঠদানে আকৃষ্ট শিশু শিক্ষার্থীরা। অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি ফলাফলে শীর্ষে অবস্থান করলেও নেই কোনো অবকাঠামো।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের উত্তর করমজা গ্রামের স্কুল শিক্ষক গোলাম মোস্তফার ছেলে জুলফিকার হায়দার বিদ্যুৎ (৩২) শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি দু-পা’য়ে ভর দিয়ে চলাচল করতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। শিক্ষা জীবন থেকেই জুলফিকার লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। টিউশনি করার জন্য এক বাসা থেকে অন্য বাসায় যেতেন হুইল চেয়ারে বসে।

বাড়ির পাশ্ববর্তী হরিখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০০৩ সালে সরকারি নাজির আকতার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ২০০৭ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স ও ২০০৮ সালে একই কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় ঈর্ষান্বিত ফলাফল অর্জন করে। এরপর বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য আবেদন করেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। প্রথমেই তিনি গ্রামের পাশ্বর্বতী পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী জুলফিকার চাকরিতে যোগদান করার পর থেকেই প্রাণবন্ত শিক্ষা অর্জন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তার ক্লাস করার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে ছুটে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ক্লাসের পড়ার পাশাপাশি তিনি সাধারণ জ্ঞানসহ ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পারদর্শী করে তোলেন শিক্ষার্থীদেরকে। ৫ম শ্রেণিতে ইংরেজী, ৩য় শ্রেণিতে বিজ্ঞান ও শিশু শ্রেণির পাঠদান করান।

জুলফিকারের পাঠদান বিষয়ে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন খাতুন ও নিরব হোসেন জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাদের শিক্ষক ব্যতিক্রমীভাবে পাঠদান করান।

৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু খাতুন ও মাইশা আকতার জানায়, জুলফিকার স্যার সকল বিষয়ে পারদর্শী। তাদের বিদ্যালয়ে ৮ শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকলেও তার তুলনা অতুলনীয়।

শিক্ষক জুলফিকার জানান, প্রতিদিন ৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কর্মস্থলে আসতে হয়। এ জন্য তার প্রতিদিন ব্যয় হয় প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক টাকা।

পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুল বারী জানান, ১৯০৬ সালে ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। শিক্ষ-শিক্ষিকা ৮ জন। জুলফিকার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তার পাঠদান আকর্ষনীয়। তার ক্লাস করার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আগ্রহ দেখায়। তার বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল প্রতি বছর ভালো হলেও ভৌত অবকাঠামোর এখনও তেমন উন্নয়ন হয়নি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান শান্ত জানান, শ্রেণিকক্ষের অভাব দূর করতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম জানান, ওই প্রতিষ্ঠানটি একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীরের পাশাপাশি ভবন নির্মাণ করা হবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক জুলফিকার হায়দার বিদ্যুৎ শ্রেণি কক্ষে প্রাণবন্ত পাঠদান করান। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তার প্রতি আকৃষ্ট।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড