• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পুলিশের মানবিকতায় ঠাঁই পেল হাত হারানো মিনারা

  হাসান আরেফিন, ঝালকাঠি

২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:২৪
পুলিশ সুপার
পুলিশ সুপার এম এম মাহমুদ হাসানের কারণে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন মিনারা বেগম (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ঝালকাঠি সদর উপজেলার পরমহল গ্রামের হতদরিদ্র মিনারা বেগম (৪০)। সৎ ছেলের নানা নির্যাতন সহ্য করে মুখ বুজে দিনাতিপাত করছিলেন ছোট্ট একটি খুপরি ঘরে। এরই মধ্যে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৎ ছেলে মাসুদ সরদার কুপিয়ে তার একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একই সঙ্গে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। এমনকি পুনরায় বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।

এমন অসহায় এক মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন একজন। যিনি নিয়েছেন তার চিকিৎসার দায়িত্ব। এমনকি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাকে বসবাসের জন্য নিজের টাকায় একটি বসতঘর তুলে দিয়েছেন তিনি।

ফলে দুর্দশাগ্রস্ত মিনারা বেগমের আজ নিজের একটি থাকার ঘর হয়েছে। হয়েছে হারানো হাতের উপযুক্ত চিকিৎসা। সুস্থ হয়ে ফিরে পেয়েছেন একটি ভয়হীন জীবনের নিশ্চয়তা। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মাহমুদ হাসানের মানবিকতায়।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বরাবরই চাকরির রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি কিছু সামাজিক ও মানবিক কাজ করে থাকেন। চেষ্টা করেন দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো সৎ ছেলের কোপে এক হাত হারানো এই মাকে ঘর তুলে দিয়ে জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

জানা যায়, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পেছনে একটি বাগানে ক্রিকেট খেলার বল নিয়ে মিনারা বেগমের ছেলে রিমন সরদারের সঙ্গে সৎ ছেলে মাসুদ সরদারের সন্তান সাইফুলের ঝগড়া হয়। এ সময় ঝগড়া থামাতে ছুটে আসেন মিনারা বেগম। কিন্তু সৎ ছেলে মাসুদ একটি দা নিয়ে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুপিয়ে মিনারা বেগমের ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ দিকে, মায়ের আর্তনাদ শুনে মেয়ে রাবেয়া বেগম ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে তাকেও কুপিয়ে হাতের আঙুল বিচ্ছিন্ন করে দেয় মাসুদ। পরে গুরুতর অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে।

এ ঘটনায় মিনারা বেগমের ছেলে রিপন সরদার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ দিকে, মিনারা বেগমের স্বামী আবদুল আজিজ সরদারও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না তার। এমতাবস্থায় মিনারা বেগম ছেলে-মেয়ে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। তবে কুপিয়ে তার হাত বিচ্ছিন্ন করার পরও থেমে ছিল না তার সৎ ছেলে মাসুদ। বারংবার বাড়িতে ফিরলে তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যায় সে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন মিনারা।

ঠিক এমন সময় তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান। তাকে নিজের টাকায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। পরে নিরাপদে মিনারাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেন। ব্যক্তিগত অর্থায়নে তাকে একটি বসতঘরও তুলে দেন তিনি। ফলে মিনারা বেগমের যেন খুশির সীমা নেই। পুলিশের এই মানবিক সহযোগিতায় তিনি ফিরে পেয়েছেন মাথা গোঁজার স্থান।

এ ব্যাপারে মিনারা বেগম বলেন, ‘আমি যে বেঁচে আছি, তা মাহমুদ স্যারের জন্যই। তিনি আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমাকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহযোগিতা করেছেন। আগে একটি খুপরি ঘরে থাকতাম, এখন বসতঘর তুলে দিয়েছেন তিনি। মাঝে মধ্যে তিনি আমাদের বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে যান। আমাকে মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল সৎ ছেলে মাসুদ সরদার। তাকেও পুলিশ সাবধান করে দিয়েছে।’

ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান দৈনিক অধিকারকে জানান, মিনারা বেগমের সৎ ছেলে কুপিয়ে তার একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এমনকি বাড়িতে ফিরলে টুকরো টুকরো করার হুমকিও দিয়েছিল সেই ছেলে। আমি কয়েক দফায় ওই বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। মানবিক দিক বিবেচনায় মিনারা বেগমের চিকিৎসা করিয়েছি। বর্তমানে তার থাকার জন্য একটি বসতঘরও তুলে দিয়েছি।

মানবিক কারণেই তিনি এমনটা করেছেন জানিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, বর্তমানে মিনারা বেগমের নিরাপত্তার স্বার্থে নজরদারি করছে পুলিশ। পাশাপাশি সৎ ছেলে মাসুদকেও কঠোরভাবে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে।

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড