লোহাগাড়া প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের কৃষি জমিতে বহু বছর থেকে ইটভাটার কাজ চলছে। নির্দিষ্ট কৃষি জমি ছাড়াও এসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে পাশের কৃষি জমি ও পাহাড়ি জমি। পাহাড়ের মাটি ও কৃষি জমির বিরাট অংশ ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলায় কৃষি জমিতে, লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চলাচল রাস্তা ও পাহাড়-বনাঞ্চলের পাশে এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ইটভাটা তৈরির কারণে পুড়ে যাওয়া ও জমিতে ইটের খোয়া পড়ে থাকায় এ বছর উপজেলায় বহু কৃষি জমি চাষাবাদ হয়নি। কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরির কারণে জমির ফলন কমে যাচ্ছে।
জানা যায়, গত ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার একর জমি ইটভাটাসহ বিভিন্নভাবে অকৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দশমিক ৯ হেক্টর জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি জমিতে। উপজেলার শতশত একর কৃষি জমি ইটভাটার দখলে। আর ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে ধানের ফলন হ্রাস পাচ্ছে। ইট ভাটার কারণে প্রতিবছর বোরো ও আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন কমছে। যেসব কৃষি জমি থেকে ভাটার জন্য টপসয়েল যোগাড় হচ্ছে সেসব জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
জানা যায়, গত বছর লোহাগাড়ায় ৪০টি ইটভাটায় ইট উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় সূত্র মতে, লোহাগাড়ায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। শুধু চরম্বা ইউনিয়নেই রয়েছে ২১টি। ইটভাটা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও কৃষি বিভাগের অনুমতিপত্র লাগে। এসব ইটভাটার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। বনাঞ্চলের পাশে, লোকালয়ে ও কৃষি জমিতে এসব ইটভাটা অবস্থিত। তবে প্রায়ই ইটভাটা কৃষি জমির ওপর এবং প্রতিটি ইটভাটায় কৃষি জমি লেগেছে প্রায় ৭ একর। ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির ওপরের উর্বর মাটি। ইটভাটায় পাহাড় ও টিলা কাটা নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা করার কোনো নিয়ম নেই। কৃষি জমির টপসয়েল নিয়ে গেলে প্রথম দুই বছর প্রায় ৭০ ভাগ ফসল কমে যায়। কৃষি জমির টপসয়েল চলে গেলে আগামী ৮ থেকে ১০ বছরে জমির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসা কঠিন। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরি না করার জন্য জোরালো প্রস্তাব রাখা হয়। নতুন এলাকার কৃষকদেরকেও কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কৃষি জমির টপসয়েল ইটভাটায় যেন ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌছিফ আহমেদ জানান, লোহাগাড়ায় ইটভাটাগুলো এক দিনে গড়ে উঠেনি। এখানে অবৈধভাবে কোনো ইটভাটা পরিচালিত হতে পারবে না। অবৈধ ও অনুমোদনহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইটভাটায় কৃষি জমির টপসয়েল ব্যবহার ও পাহাড়ের মাটি কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন সবসময় জিরো টলারেন্সে। লোহাগাড়ায় ইটভাটাগুলো অধিকাংশ ইটভাটা কৃষি জমির ওপর। উপজেলায় যে হারে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে পরিবেশ ও খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইটভাটা পরিবেশ বান্ধব করা না গেলে মানব স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড