• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাথরঘাটায় বিস্ফোরণ : চমেকে চিকিৎসাধীনরা শঙ্কামুক্ত

  আবু তাহের, চট্টগ্রাম

২০ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:০৭
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাসের পাইপলাইনে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ও আহত হওয়া আটজনের সাতজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) এবং একজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চমেকে চিকিৎসাধীন সাতজনের মধ্যে তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বাকি চারজন সাধারণ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চমেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তিনজন হলেন- রিকশাচালক নাজের আহমদ (৬৫), সিএনজি চালক মোহাম্মদ হামিদ (৪০) এবং শিক্ষিকা তৃষা গোমেজ। তিনজনের কেউই অগ্নিদগ্ধ না হলেও গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রিকশাচালক নাজের আহমদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পশ্চিম পটিয়া এলাকার বাসিন্দা নাজের আহমদ (৬৫) থাকেন শহরের চাকতাই এলাকায়। ঘটনার দিন তিনি এ সড়কে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে ধারণা করছেন তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকা স্বজনরা। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া নাজের আহমদ কথা বলতে পারছেন না। তার ইতোমধ্যে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। তিনি বুকে, কাঁধে ও মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তিনি কথা বলতে না পারলেও তার অবস্থা দিন দিন উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চমেকে চিকিৎসাধীন নাজের আহমদের সঙ্গে থাকা স্বজনরাও বলতে পারছে না কীভাবে তিনি আহত হয়েছিলেন। এ রিকশা চালকের সহধর্মিণীও অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে পরিবারের আপনজন কাউকে দেখা যায়নি।

সিএনজিচালক মোহাম্মদ হামিদ দুর্ঘটনার দিন নাস্তা আনার জন্য বের হয়েছিলেন মাহিন্দ্র (সিএনজি) চালক মোহাম্মদ হামিদ (৪০)। তার সঙ্গে থাকা তার সহধর্মিণী কামরুন নাহার বলেন, আমার স্বামী সকালে নাস্তা আনার জন্য বের হয়েই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে জ্ঞান ফিরলেও তিনি কথা বলতে পারছেন না। দুই কন্যা সন্তানের জনক হামিদই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের এক মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে এবং অপর মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।

মোহাম্মদ হামিদের সহধর্মিণী কামরুন নাহার বলেন, পরিবারে উপার্জন করার কেউ নেই। তার একার আয়েই সংসার চলে। দুই মেয়ের পড়ালেখা ও সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হয় স্বামীর একজনের আয় থেকে।

কামরুন নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীর কিছু হয়ে গেলে পুরো পরিবারকে নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে।

বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয় কীভাবে নির্বাহ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসার পুরো খরচই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে। তাদের কিছু টুকিটাকি বাইরের খরচ করতে হয় বলে তিনি জানান।

এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

তৃষা গোমেজ স্থানীয় সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষিকা তৃষা গোমেজ (২২)। তিনি প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। তিনি মাথায় এবং হাতে আঘাত পেয়েছেন। জ্ঞান ফিরলেও কথা বলায় ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা এবং মুখে অক্সিজেন লাগানো থাকায় কথা বলতে পারছেন না। আইসিইউর বাইরে উদ্বিগ্ন পরিবারের অন্য সদস্যরা।

তৃষা গোমেজের বাবা অনল গোমেজ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল সৈকতে কর্মরত। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে বাসা হওয়ায় দুর্ঘটনার পর অন্যদের মতো আমরাও বের হয়েছিলাম।

মেয়ের দুর্ঘটনার খবর কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি মেয়ে যথারীতি স্কুলে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর খবর নেওয়ার জন্য মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পেয়ে স্কুলে যোগাযোগ করি। স্কুলেও না যাওয়ায় আমাদের মনে কিছুটা আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। আমরা পরবর্তীকালে চমেকে খবর নেওয়ার পর মেয়ের সন্ধান পাই।

এখন মেয়ের কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা বলছেন, অবস্থা উন্নতির দিকে। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় কিছুটা টেনশন হচ্ছে। তবে ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন বলে তিনি জানান। তার আরেক মেয়ে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবার।

তিনি বলেন, আমার মেয়ের এরকম বিপদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তিনি চিকিৎসা ব্যয় এবং চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

আহতদের চিকিৎসার অগ্রগতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে ইন্টেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, পাথরঘাটা দুর্ঘটনায় আহত এক নারী ও দুই পুরুষ এ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনজনের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। তিনজনকেই আশঙ্কামুক্ত বলা না গেলেও দিন দিন তাদের উন্নতি হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আহতদের চিকিৎসা ব্যয় কীভাবে নির্বাহ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে যত সুযোগ সুবিধা ও চিকিৎসা রয়েছেন সবগুলোই আহতরা পাচ্ছেন একদম বিনা মূল্যে। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে পুরো বিভাগই সচেতন বলে জানান তিনি।

পাথরঘাটা দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সর্বশেষ তথ্য জানার জন্য হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাথরঘাটা দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে চিকিৎসা প্রয়োজন এরকম আটজনকেই মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রথম দিনই অগ্নিদগ্ধ অর্পিতা নাথকে (১৬) ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়েছিল। বাকি সাতজনের চিকিৎসা চলছে চমেকে। তাদের মধ্যে চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে। তারা একটু-আধটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং অচিরেই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যাবেন।

অপর দিকে যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের চিকিৎসা চলছে আইসিইউতে। তবে আইসিইউতে চিকিৎসাধীনদের অবস্থাও উন্নতির দিকে বলে তিনি জানিয়েছেন। আইসিইউতে থাকলেও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

আহতদের চিকিৎসা ব্যয় সর্ম্পকে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনালের মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসপাতালে বিদ্যমান সকল চিকিৎসা সেবাই তারা বিনা মূল্যে পাচ্ছেন। যেহেতু অনেকগুলো মানুষ এক সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেহেতু বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তাদের চিকিৎসা সেবায় কোনো ধরনের কমতি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড