গাইবান্ধা প্রতিনিধি
বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের ক্ষমতাসীন দলের প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিকের আদালতে সাক্ষী ও আসামিদের উপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। এ যুক্তিতর্ক চলে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে যুক্তিতর্ক শেষ না হওয়ায় আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আবারও যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারক।
যুক্তিতর্কের প্রথমে আদালতে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এ সময় আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা কাদের খাঁনকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে যুক্তি খণ্ডান। যুক্তিতর্কের সময় আদালতে মামলার সাক্ষী ও নিহতের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খাঁনসহ অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে ছয়জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার আসামি কসাই সুবল কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। এছাড়া ভারতে পলাতক রয়েছেন অপর আসামি চন্দন কুমার। তবে আসামি চন্দনকে দ্রুতই গ্রেফতার করে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
যুক্তিতর্ক শেষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক গণমাধ্যকর্মীদের বলেন, ‘মামলার এজাহার, আসামি-সাক্ষীদের স্বীকারোক্তি জবানবন্দি, অস্ত্র উদ্ধারসহ নানা দিক আলোকপাত করে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে সব যুক্তিতর্ক উপস্থাপন তুলে ধরা শেষ না হওয়ায় আগামীকাল যুক্তিতর্কের দ্বিতীয় দিন ধার্য করেছেন বিচারক। যুক্তিতর্ক শেষ হলে এ মাসেই মামলার রায় ঘোষণার দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন আদালত। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় আদালতে অভিযুক্তদের ফাঁসিসহ সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে বলে আশা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হামিদুল হক বলেন, ‘এমপি লিটনকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে ঠিক তেমনি আসামি কাদের খাঁনকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। হত্যা ঘটনার সময় কাদের খাঁন দেশের বাইরে ছিলেন। মামলার সঠিক তদন্ত ও আদালত সঠিক বিচার করলে আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হবে বলেও আশা আইনজীবীদের।’
আলোচিত এ মামলা ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বাদী নিহতের স্ত্রী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর মামলার সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে কারাগারে থাকা আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানি হয় আদালতে।
এছাড়া লিটন হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া অস্ত্র আইন মামলায় গত ১২ জুন আবদুল কাদের খাঁনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি অস্ত্রের মধ্যে একটি অস্ত্র কাদের খাঁন নিজে থানায় জমা দেন। একটি অস্ত্র ৬ রাউন্ড গুলিসহ তার নিজ বাড়ির উঠান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে অপর অস্ত্রটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল। তদন্ত শেষে কাদের খাঁনসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে গ্রেফতারের পর থেকে কাদের খাঁন গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া আসামি কাদের খাঁনের পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়ি চালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, শাহীন ও রানা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড