বরিশাল প্রতিনিধি
মুহিম খন্দকার (১৪) নামে এক জেএসসি পরীক্ষার্থীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর পর থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বরিশাল নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ইছাকাঠীর বাসিন্দারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটির জন্য দায়ী বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক এনামুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর কাশীপুর বাজার সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সমবেত হয়ে মানববন্ধন করেছেন শত শত নারী-পুরুষ। ঘটনাটির প্রতিবাদে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে নিজেদের ক্ষুব্ধ মত প্রকাশ করেছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মানবাধিকার কমিশনের বিমানবন্দর থানা শাখার সভাপতি মুকুল মুখার্জী বলেন, ‘মুহিম খন্দকার একজন নিরীহ প্রকৃতির কিশোর। এলাকার শতভাগ মানুষ এই সত্য স্বীকার করবেন। তাকে আটকের পর অসংখ্য স্থানীয় নারী-পুরুষ থানায় উপস্থিত হয়ে এ কথা বলেছে। এমনকি ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও থানায় গিয়ে একই কথা বলেছেন। কিন্তু পুলিশ সবকিছু উপেক্ষা করে তাকে থানায় এনে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। শুধু তাই নয় একটি মনগড়া এজাহার লিখে তাকে আদালতে পাঠিয়েছে।’
তিনি বলেন, ঘটনাটি এক প্রকার শিশু নির্যাতনের শামিল। এ সময় ঘটনার জন্য দায়ী এসআই এনামুল হকের বিরুদ্ধে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, নিরীহ শিশুছাত্র মুহিমকে এভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ায় এখন তারাও নিজেদের সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাচ্চু দৈনিক অধিকারকে বলেন, কারাবন্দি কিশোর মুহিমের জামিন চেয়ে সোমবার আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) শিশু আদালতে এ আবেদনের শুনানি হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর পশ্চিম ইছাকাঠীতে নিজ বাড়ির সামনে থেকে মুহিম খন্দকারকে আটকের পর তার কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে এমন অভিযোগ তুলে মুহিমকে থানায় নেয় পুলিশ। পরবর্তীকালে তার কাছে ১৪ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মুহিমের নামে মামলা দায়ের করেন এসআই এনামুল হক।
তবে, ওই মামলার সাক্ষীসহ উপস্থিত অন্যান্যরা জানান, পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের ইয়াবা দেখাতে পারেনি। মুঠোফোনে খবর পেয়ে অন্য দুই পুলিশ সদস্য আসার পর তল্লাশির নামে অন্ধকারের মধ্যে বাগান থেকে ইয়াবাসহ একটি সিগারেটের প্যাকেট উদ্ধার করেছে। যা পুরোটাই পুলিশের সাজানো বলে তাদের দাবি।
মুহিম খন্দকারের বাবা সাইদুর রহমান হিরন দৈনিক অধিকারকে জানান, জমিজমা নিয়ে নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। তাদের যোগসাজশে পুলিশ কথিত ইয়াবা উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে।
এ দিকে, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো ও কিশোর মুহিমকে থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় এসআই এনামুল নিজেকে বাঁচাতে সমঝোতার প্রস্তাবসহ নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। পাশাপাশি ঘটনাটিতে পুলিশি তদন্ত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখতার হোসেন।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড