• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অনিয়মকেই নিয়ম করে নিয়েছেন মাদরাসা সুপার

  ফেনী প্রতিনিধি

১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১১:২৬
ফেনী
অভিযুক্ত মাদরাসা সুপার মোজাম্মেল হক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইয়াকুবপুর ইছহাকিয়া আলিম মাদরাসা সুপার মোজাম্মেল হকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চরমে। তার কাছে এসব হীন অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনায় মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্টদের বরাবরে একাধিক অভিযোগ করলেও তদন্তের দায়িত্বে থাকা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন জমা দেননি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ইয়াকুবপুর ইছহাকিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল আমিন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণ মেয়াদ শেষে অবসরে যান। তার স্থলাভিষিক্ত করতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে গত ৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। এতে নয় জন প্রার্থী আবেদন করেন।

একই বছরের ২২ জুন নিয়োগ পরীক্ষা (লিখিত ও মৌখিক) অনুষ্ঠিত হয় এবং ১ জুলাই রাজাপুর মাদরাসার সাবেক সহকারী মৌলভী মোজাম্মেল হককে সুপার হিসেবে নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্টরা।

অবাক করার মতো তথ্য হলো, তিনি শুরুই করেন প্রতারণার মধ্য দিয়ে। তার মূল শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্রের ফটোকপি সনদ সত্যায়ন করতে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নেন। তার একাধিক সনদ ও অভিজ্ঞতা সনদে যিনি স্বাক্ষর করেছেন বলে দেখা গেছে সেই কলেজ শিক্ষক আদৌ অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের কাগজপত্র সত্যায়ন করেননি। এমন জালিয়াতির কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কবিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ কামাল ভূঁঞা।

তিনি বলেন, আমাকে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক হিসেবে দেখানো হলেও আমি মূলত চার বছর আগে থেকে ওই কলেজে নেই। ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়ে আমি বর্তমানে অধ্যাপক এবং কবিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ।

তিনি আরও বলেন, আমি কারও কাগজপত্র সত্যায়ন করিনি। সম্ভবত ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো অসাধু শিক্ষক আমার নামে সিল তৈরি করে এসব অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন।

দুটি সত্যায়নে তার স্বাক্ষর দুরকম দেওয়া হয়েছে এটি দেখে তিনি চমকে ওঠেন। তিনি এই জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া দুষ্কৃতিকারীর শাস্তি দাবি করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়োগের সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি ছাড়াও সুপার মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাদরাসা অফিসের বাইরে ছাত্রদের ছাড়পত্র দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, পাঠদানে ব্যর্থতা ও বিলম্বে প্রতিষ্ঠানে আসারও। তাছাড়া অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় শতভাগ স্বাক্ষর করার মতো প্রতারণার আশ্রয়ও নেন তিনি।

একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথম দিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে সুপারের অনিয়ম, পাঠদানে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাদরাসার সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন।

সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনা তদন্তে উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনকে দায়িত্ব দেন। তিনি সরেজমিনে তদন্ত করে গেলেও দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাসেও প্রতিবেদন জমা দেননি মর্মে অভিযোগ তোলেন একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

এ দিকে গত পাঁচ অক্টোবর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সুপারের ক্লাসে অনুপস্থিত, সমাবেশে অনুপস্থিত, শ্রেণিতে বিলম্বে উপস্থিতি, শ্রেণি ঘণ্টা পড়ার আগেই শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ ও বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস তখনো আরম্ভ না করার অভিযোগে আরও একটি অভিযোগ পত্র মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ সভাপতির নিকট হস্তান্তর করতে সহকারী সুপারের কাছে জমা দেন। তবে এ আবেদন না জমা দিয়ে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের বলেন, সুপার এখনো নতুন, ধীরে ধীরে নিয়মে চলে আসবেন। তারা জানান, নতুন ভেবে আমরা আবেদনটি সভাপতি বরাবর প্রেরণ করিনি।

অন্য দিকে আবদুল কাদের, উম্মে কুলসুম জেরিন ও তাছলিমা আক্তারের কাছ থেকে রশিদ ছাড়াই এক হাজার টাকা করে আদায় করে ওই সব শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র দেন বলেও জানা গেছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো এসব ছাড়পত্র তিনি অফিসে না দিয়ে কখনো দাগনভূঁঞা বাজারের বনফুলে, কখনো দুধমুখা বাজারে আবার কখনো বা স্থানীয় বায়তুল আহসান মসজিদে দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এছাড়া রশিদে টাকা আদায় করলেও যে পরিমাণ টাকা আদায় করেন রশিদে দেখান তার অর্ধেক। তার এমন অস্বচ্ছতায় ছাত্র-ছাত্রীরা লজ্জিত হন।

এ দিকে পরীক্ষার ফি বাবদ আদায়কৃত ৫২ হাজার টাকার পুরোটা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আট হাজার টাকা সুপার নিজের জিম্মায় রেখে দেন। অন্য দিকে ২০১৮ সালের ৮ম শ্রেণির কোচিং ফি ও ২০১৯ সালের আলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকার কোনো হিসাব জানে না হিসাব সংশ্লিষ্ট অডিট কমিটি। উল্টো প্রতিষ্ঠান থেকে আট হাজার টাকা নিয়ে খরচ করেন সুপার।

নাম প্রকাশ করতে অপারগ অডিট কমিটির এক সদস্য জানান, বিধি অনুসারে প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার অডিট কমিটির মিটিং হওয়ার বিধান থাকলেও গত ১৫ মাসে কোনো মিটিং হয়নি।

এছাড়া গত ১৫ মাসে মূল কমিটি ও অর্থ কমিটিরও কোনো সভার আয়োজন করেননি অভিযুক্ত সুপার মোজাম্মেল হক।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মাদরাসার সুপার মাওলানা মোজাম্মেল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তার সনদসমূহ সত্যায়ন ভুয়া এমন বিষয় তার নজরে আনলে তিনি বলেন, আমি কাকে দিয়ে সত্যায়িত করিয়েছি তা ভুলে গেছি।

এ বিষয়ে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় তার জানা নেই। পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

ওডি/এমবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড