• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এক রাতেই নির্মিত কয়ারপাড়া জামে মসজিদ

  রফিকুল ইসলাম রফিক,গাইবান্ধা

১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৪
কয়ারপাড়া জামে মসজিদ
গাইবান্ধার কয়ারপাড়া জামে মসজিদ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যকলার অনন্য এক নিদর্শন গাইবান্ধার কয়ারপাড়া জামে মসজিদ। তবে বর্তমানে এ মসজিদটি আমালাগাছী কয়ারপাড়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ছোট ছোট গোলাকার ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ মসজিদ। তবে আকারে ছোট হলেও প্রাচীন কারুকার্যে তৈরি মসজিদটির নকসা ও গম্বুজগুলো বেশ দৃশ্যমান। এ মসজিদটির বয়স প্রায় ১ হাজার বছর। তবে সংরক্ষণের অভাবে মসজিদটি প্রায় বিনষ্ট হওয়ার পথে।

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বরিশাল ইউনিয়নের আমলাগাছী গ্রামের উন্মুক্ত স্থানে এ মসজিদের অবস্থান। দেয়ালের শুভ্র রঙগুলো নষ্ট হয়ে ক্ষয় হওয়া ইট গুলো বের হয়ে গেছে। মসজিদটির একাধিক স্থান ধসে পড়েছে। দেয়ালে উর্দু ও ফারসি ভাষায় কিছু লেখা আছে যা অস্পষ্ট। মসজিদে তিনটি দরজা ও উত্তর দিকে একটি ছোট মিনার রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মসজিদটি এক রাতেই নির্মিত হয়েছে। আবার অনেকেই বলছে বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি পশ্চিম দিক থেকে আসা এক দরবেশ সাহেব এ জায়গাতে নামাজ পড়তেন। তিনি এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তবে এখানে কেউ চুরি বা অসম্মানজনক কিছু করলে অলৌকিকভাবে সে শাস্তি পায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে তবারক নিয়ে আসেন অনেকে। সহীহভাবে মানত করলে তা পূরণ হয় এবং হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে।

ওই গ্রামের বয়োজোষ্ঠ্য আহসান হাবিব খোকন বলেন, সুলতান মাহমুদের আমলে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে প্রতি রাতে সাদা পোশাক পরিধানকারী গায়েবী এক ব্যক্তি নামাজ আদায় করে। আশপাশে লোকজনের আনাগোনা পেলে আর দেখা যায় না। প্রতি শুক্রবারে এখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও আসেন মানত করতে।

স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস মসজিদ যখন নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল এ এলাকা। দেয়ালের ওপরের দিকে ফুল ও লতার ছবি আঁকা। দেয়ালের ইটের গাঁথুনি অনেক পুরু। মূল মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৮ হাত প্রস্থ ৬ হাত। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির গম্বুজ ১৫ ফুট উঁচু। মসজিদটি প্রাচীন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপনা হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ দেখতে আসেন এ মসজিদ। অনেকে একে গায়েবি মসজিদ বলেও দাবি করে।

আমলাগাছী কয়ারপাড়া এই মসজিদের নামকরণ নিয়ে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায় না। তবে প্রচলিত আছে খোরা শান নামে এক পীর এই এলাকায় আসেন এবং এই মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই থেকে মসজিদের খোরা থেকে নামকরণ করা হয় কয়ার মসজিদ। যা পরে কয়ারপাড়া মসজিদ নামে পরিচিতি পায়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. সাদেকুর রহমান জানান, ১১০৩-০৪ সালের মধ্যে খাঁ বংশের বাহার আলী খাঁ নামে এক কামেল পীর আসেন এবং তার আমলে এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্ভাব্য তিনিই এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৩২৬ সালের দিকে এক ভূমিকম্পে মসজিদটির সামনের অংশ মাটির নিচে দেবে যায়। মসজিদটির বেশির ভাগ মাটির নিচে দেবে যাওয়ায় নামাজের জন্য অনুপযোগী হয়ে পরে। পরবর্তীতে এ অংশটুকুর বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে এবং ভেঙে পড়তে শুরু করে।

১৯০৫ সালের মাঝামাঝি পূর্ব দিকে ঈদগাহের জায়গা বাড়ানো হয়। সেখানেই ঈদের নামাজের জন্য মাঠ তৈরি করা হয়। ১৯৮০ সালে চার দিকে মাঠটির প্রাচীর করে দেওয়া হয়। তবে মসজিদের বাকি অংশ জঙ্গলে ছেয়ে যায়। গম্বুজে বটের চারা, লতাপাতা গজিয়ে ওঠে। প্রাচীন স্থাপত্যকলার নিদর্শন হিসেবে যথাযথ রীতি মেনে যেভাবে সংস্কার দরকার ছিল তা করা হয়নি। মসজিদটি সংরক্ষণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করব। এখন মসজিদের পুরানো সৌন্দর্যের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

বরিশাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মান্নান জানান, কয়ারপাড়া মসজিদটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ। বহু আগে ওখানে মসজিদ ছিল, এখন মসজিদটি ধ্বংসের পথে। বর্তমানে মসজিদের জায়গাতে এলাকার লোকেরা দুই ঈদের নামাজ আদায় করেন।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য দুই লাখ টাকা কয়ারপাড়া মসজিদটির নামে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল হোসেন জানান, মসজিদটির খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। সংস্কার এবং সংরক্ষণ করা যায় কিনা। সংরক্ষণের উপযোগী হলে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ দিকে সংশ্লিষ্টরা মসজিদটির সংস্কার করে সংরক্ষণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড