• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তিন বছরেও শেষ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৩৪
সিডর
বাঁধ নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

আজ সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানে খুলনা, বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় জেলা গুলোতে। সুপার সাইক্লোন সিডরের ভয়াবহতার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিআঞ্চলের মানুষ। সে দিনে সিডরের ভয়াল ছোবলে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। প্রিয়জনকে হারানো ওই দিনের কথা মনে করে এখনও বুকফাটা কান্নায় বুক ভাসায় শরণখোলাবাসি।

সে সময় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে সরকারি হিসাবে মারা যায় ৯০৮ জন। এর মধ্যে শরণখোলার উপজেলায় মারা যায় ৮শতাধিক মানুষ। যার অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ক্ষেত। তবে বেসরকারি হিসাবে এ মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বাগেরহাটের পাঁচটি উপজেলার প্রায় দেড়শ কিলোমিটার এলাকা।

এদিকে, শরণখোলা সুপার সাইক্লোন সিডরের জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হওয়া ৬২ কিলোমিটার অংশের বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরুর তিন বছরেও শেষ হয়নি। শরণখোলা উপজেলার দেড় লাখের অধিক জনগোষ্ঠী জানেন না তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য নির্মাণাধীন এই বাঁধের কাজ কবে শেষ হবে। দুর্যোগের ঘনঘটা হলেই শরণখোলারবাসির দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তাই তারা অবিলম্বে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ইতিমধ্যে বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী অর্থ বছরের জুন মাস নাগাদ তারা পুরো কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশা করছেন।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী সিডরের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বহু মানুষের প্রাণহানি হয় এই শরণখোলাতেই। সে সময়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেশ্বর ও ভোলা নদের উপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি তোলে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রায় সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বাঁধ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি কাজ পায় বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান। বাঁধের জমি গ্রহণের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তারা শুরু করে বাঁধের নির্মাণ কাজ। এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হলেও বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

শরণখোলা সাউথখালী ইউনিয়নের বগি এলাকার ইউপি সদস্য মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এক যুগ আগের হওয়া ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসের কথা মনে পড়লে এখনও আমি আঁতকে উঠি। ভয়াবহ সেই দিনে সাউথখালী ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ মারা যায়। তারপর থেকে আমাদের দাবি ছিল এই এলাকায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের। সরকার আমাদেরকে জলোচ্ছ্বাসে থেকে রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ কাজের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেলেও কাজ এখনো চলছে। আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা চাই এই বাঁধটি যেন নদী শাসন করে টেকসই করা হয়। আমার পাশাপাশি এই একই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ২০০৭ সালের সিডরে আমার এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনে দাবি এই বেড়িবাঁধ। এটি নির্মাণ করছে সরকার। বাঁধটি নদী শাসন করে যেন টেকসই করা হয় সেই দাবি জানান তিনি।

উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, উপকূলের মানুষকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে সরকার বাঁধ উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। শরণখোলা উপজেলার ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার অংশের বেড়িবাঁধ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা এই বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ শেষ করেছি। আগামী ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ এই বাঁধের কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। এটি নির্মাণ হলে ওই এলাকার মানুষ ঝড় জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, সিডরের পর ক্ষতিগ্রস্ত শরণখোলা উপজেলায় নানা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যার ফলে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তা ঘাট, কালভার্ট নির্মাণসহ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও সরকার আরও অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে এই দুর্গত মানুষের জন্য। আশা করছি দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা যাবে।

ওডি/এমবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড