আল-মামুন, খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মিষ্টি পানের সুখ্যাতি আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। মূলত পান উৎপাদনের সূত্র ধরেই পানছড়ি উপজেলার নামকরণ হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এ উপজেলার ছড়ার (পাহাড়ি খাল) মুখের সমতল ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি পান উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই পান নদী পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়ে থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় খাগড়াছড়ির এই উপজেলায় প্রচুর পান উৎপাদিত হতো। মাঝে কিছুদিন পান চাষে এখানকার চাষিরা আগ্রহে হারিয়ে ফেলেন। সম্প্রতি এখানকার পানের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আবারও পানচাষ শুরু করেছেন। ফলে পান চাষে এখানকার চাষিরা আবারও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে পানচাষ বৃদ্ধিতে এখানকার কৃষকদের ভাগ্য ফিরছে।
পানছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় সপ্তাহে দুই-তিন দিন পানের বিশাল হাট বসে। সে হাটে মহাসমারোহে বিক্রি হয় স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত মিষ্টি পান। এতে সংসারের অভাব মিটিয়ে চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে।
পান চাষি যতিন্দ্র চাকমা, রিপন চাকমা, চাথোই মারমা সঙ্গে আলাপকালে জানায়, বর্তমানে পানের বাজার দর বেশ ভালো। এক বিড়া (৮০টি) পান সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। প্রকার ভেদে দামটা আবার বেশিও পাওয়া যায় বলে জানান।
এর মধ্যে শনখোলা, যুবনাশ্বপাড়া, পূজগাং, কানুনগোপাড়া, তাপিতাপাড়া, রাজকুমার পাড়া, বাইগ্যাপাড়া, জগৎসেন পাড়া, বড়মোড়া, শান্তিপুর, লতিবান এলাকার পানের বরোজ থেকে চাষিরা টমটম, সিএনজি, মাহিন্দ্র ও কেউ কেউ কাঁধে করে পান নিয়ে আসে।
শনি, রবি ও বুধবারে করল্যাছড়ি, লোগাং, কানুনগোপাড়া, রাঙাপানিছড়া, কলেজ গেইট এলাকায় হাট বসে। এসব হাটে খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও হাটহাজারি থেকে পানের সন্ধানে বেপারীরা হাজির হন।
সরেজমিনে পানের পাইকারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, খণ্ড খণ্ডভাবে জমে উঠেছে পানের হাট। কানুগোপাড়ার সুহেল বিকাশ চাকমা পানচাষি বড় মোড়ার তাহেলী ত্রিপুরা জানায়, বুধবারে করল্যাছড়ি, শনি-সোম কলেজ গেইট এলাকায় বিশাল হাট জমে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকার পান বেচা-কেনা হয়।
খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হাটহাজারি থেকে আসা ব্যবসায়ী পারভেজ হোসেন, মোমিন উল্লাহ, সাইফুল, এরশাদ উল্লাহ জানান, তারা দীর্ঘ বছর ধরে পানছড়ির পান ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত। এখান থেকে পান নিয়েই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে থাকেন।
চাথোই মারমাসহ বেশ কয়েকজন পানচাষি জানান, মাঝে মাঝে পানের বরজে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। যার মধ্যে রয়েছে- তেল পোকা রোগ, মাছের চোখ, ঝিনুক পচা, লেজপচা, জুমমারা, গোঁড়াপচা ইত্যাদি। এ বিষয়ে কৃষকদের ভালো প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে, যথাসময়ে রোগ-বালাই নিরোধ করা সম্ভব হতো। এতে চাষিরা আরও লাভবান হতে পারতেন।
পানছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন, উল্টাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা বলেন, পানচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রশিক্ষণে পরামর্শ পেলে চাষিরা নিজেরাই পানের রোগ-বালাই দূর করতে সক্ষম হবেন।
পানছড়ি কৃষি অফিস ও চাষিদের তথ্য সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে অত্র উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। চাষির সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। একর প্রতি ৪০/৪৫ হাজার পানের আগা বা চারা লাগানো হয়। লাগানোর ছয়-সাত মাস পর থেকেই পান পাতা উত্তোলন শুরু হয়। রোগ বা পোকার আক্রমন না হলে একর প্রতি এক লাখ বিড়া (প্রতি বিড়া ৮০টি ) পান উৎপাদন সম্ভব।
কৃষি অফিস জানায়, এখানে পানে পোকার আক্রমন খুব কম, ছত্রাকজনিত রোগের প্রকোপ বেশি। পান রোপনের আগে ছত্রাকনাশক দিয়ে আগা শোধন করলে পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়। রোপনের আগে কৃষকেরা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ নিলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলাউদ্দিন শেখ জানান, পান চাষের জন্য এই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া খুবই উপযোগী। পান চাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করা যাচ্ছে ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকেরা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে সামনে পান চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ করার ব্যাপারে কৃষি অফিস আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড