এম,ডি অসীম, খুলনা প্রতিনিধি
১০ নভেম্বর ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে খুলনায় গ্রামের পর গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। ভেঙেছে বসতঘর ও গাছপালা। এতে সাধারণ মানুষের জীবন প্রায় বিপন্ন। গৃহহীন মানুষের আর্তনাদে চারিদিকে করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, ঝড়ে খুলনার কয়রা, দা-কোপ ও পাইকগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলায় হাজারো ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা বসতঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। রাস্তাঘাটে গাছপালা উপড়ে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সঙ্গে মাছের ঘের ভেসে গেছে। ধানক্ষেতসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যুৎ অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে গাছ চাপা পড়ে দুইজন নিহত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে তাদের কেউ প্রতিবেশীর বাড়ির বারান্দায়, কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউবা রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। আবার কেউ কেউ সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে উঠেছেন। কিন্তু অধিকাংশ সাইক্লোন শেল্টারই হচ্ছে স্কুল কিংবা কলেজ। ফলে সেখানে তারা কতদিন বা থাকতে পারবেন?
খুলনা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে খুলনা জেলায় ৯ হাজার ৪৫৫টি বাড়ি পুরোপুরি এবং ৩৭ হাজার ৮২০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দাকোপ উপজেলার চালনা গ্রামের বাসিন্দা হেমায়েত, ঝড়ের রাতে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। ঝড় শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে তার দুটি বসতঘর। হেমায়েত বলেন, 'ঝড়ের রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে তো নিরাপদেই ছিলাম। এখন আমাগের নিরাপদ আশ্রয় কে দেবে?' গত তিন দিন তিনি খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামের কৃষক ডাবলু সানা বলেন, বাতাসে তার ক্ষেতের ধান লুটিয়ে পড়েছে। এখন তিনি কী করবেন? শুধু এ দুইজন নয়, এরকম হাজারও পরিবার মানবতার জীবন যাপন করছেন। খুলনার পশুর নদীর তীরে ওয়াপদা কলোনিতে ঘর তুলে বসবাস করতেন শফিক উদ্দিন। ছিল একটি মুদি দোকানও। ঝড়ের সময় আশ্রয় নিয়েছিলেন আশ্রয় কেন্দ্রে, বাড়ি ফিরে দেখেন ঘর ও দোকান কিছুই নেই। এখন নতুন করে ঘর নির্মাণের টাকাও নেই। ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তার চায়ের দোকানটিও ভেঙে গেছে। এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন জানিয়েছেন, বুলবুলের কারণে খুলনা পাঁচটি জেলার চার লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ৩২টি ফিডারের এসব গ্রাহকদের মধ্যে ১৫টি ফিডার চালু উপযোগী হয়েছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে বাকি ফিডারের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে বুলবুলের আঘাতে খুলনা জেলায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ক্ষেত রয়েছে ২৫ হাজার হেক্টর। খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পঙ্কজ কুমার মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা জানান, খুলনায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ৮৬৪ হেক্টর জমির শাক সবজি, ৫২ হেক্টর জমির কলা, ১০০ হেক্টর জমির পেঁপে, ৪০ হেক্টর জমির সরিষা ও ৩৬ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার বটিয়াঘাটায় সরিষা, আর রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলায় পানের চাষ হয়।
উপপরিচালক আরও বলেন, খুলনায় ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন, ৩৬ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি, ৫০৩ হেক্টর জমিতে কলা, ৩৫৭ হেক্টর জমিতে পেঁপে, ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা ও ৭৯০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। খুলনায় চাষ হওয়া সরিষার শত ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়াদ্দার অধিকাকে বলেন, ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেওয়া হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন অধিকারকে বলেন, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলো অসুবিধায় পড়েছে। তাদের গৃহ নির্মাণ সহায়তার চেষ্টা চলছে। আশা করি, শিগগির ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে পুনর্বাসন করা যাবে।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড