• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চন্দনাইশে সাড়ে ১২শ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ

চন্দনাইশে সবজি চাষে সবুজ বিপ্লব

  চন্দনাইশ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৯
চন্দনাইশে সবজি চাষ
চন্দনাইশে সবজি চাষ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

চলতি রবি মৌসুমে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি আবাদ হয়েছে। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খ নদীর উভয় তীরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। যাকে সবুজ বিপ্লবও বলা যেতে পারে। শীতকালীন সবজির এই নীরব বিপ্লবে খুশি স্থানীয় কৃষকরা।

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খ নদীর উভয় তীরে ১০ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষকের বসবাস। যাদের জীবন-জীবিকা সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন ভোরের কুয়াশায় ফসলের মাঠে গিয়ে দিনভর সবজি পরিচর্যায় শ্রম দিচ্ছেন চাষিরা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত শঙ্খচরের মাটি সবজি চাষের জন্য বেশ উর্বর এবং উপযোগী হওয়ায় এখানে সব ধরনের সবজি চাষ হয়। পুরো বছরেই এ অঞ্চলের কৃষকরা শঙ্খচরে সবজি চাষ করে থাকেন।

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী, ধোপাছড়ি, হাসিমপুর, বৈলতলী, বরমা এবং সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, পুরানগড়, ধর্মপুর, নলুয়া, চরতী ও আমিলাইশ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষক সবজি চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এই চরে উৎপাদিত বিষমুক্ত বেগুন ও মুলার আলাদা কদর রয়েছে সারা দেশব্যাপী। এছাড়া শিম, ঢেঁড়স, করলা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঝিঙ্গা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পেঁপে, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাক উৎপাদন হয় এখানে।

শঙ্খচরে উৎপাদিত সবজি গুণেমানে ও স্বাদে ভালো হওয়ায় ভোজন রসিকদের কাছে এখানকার সবজির বেশ চাহিদা। কৃষকরা ভ্যান, রিকশা, ট্রলি, নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত বোটে করে দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বাজারে নিয়ে আসেন সবজি বিক্রির জন্য। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব বাজার থেকে সবজি সংগ্রহ করে ট্রাকযোগে আশপাশের এলাকা ও চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করেন।

শঙ্খচরের সবজি চাষি দোহাজারী কিল্লাপাড়া এলাকার জসিম ও জামাল জানান, অধিক লাভের আশায় চাষিরা আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেন। শঙ্খচরে ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই মুলা, বেগুন, বরবটি ও শিম চাষ শুরু হয়। তা কার্তিক মাসের শুরু থেকেই বাজারে বিক্রি করা যায়। এছাড়া শীতকালীন অন্যতম সবজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি আশ্বিন মাসের শেষের দিকে রোপণ করেন তারা। এর আগে তারা মুলা বিক্রি করেন। আশ্বিন মাসের শেষ দিকে ও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই সকল প্রকার শীতকালীন সবজি বাজারে পুরোদমে বিক্রি করেন বলেও জানান তারা।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজার দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি ভার (৮০ কেজি) মুলা ২২শ থেকে আড়াই হাজার টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বরবটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, তিতা করলা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মুলা শাক ও কপিশাক প্রতিভার (৮০ আঁটি) ১ হাজার ২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধনিয়া পাতা প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাষিরা জানান, শীতের সবজি শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপি শঙ্খচর থেকে এখনো আসা শুরু হয়নি। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির সরবরাহ বাড়বে। তখন শীতের সকল প্রকার সবজি পাওয়া যাবে। সবজি সংরক্ষণের জন্য চন্দনাইশ কিংবা সাতকানিয়ায় হিমাগার না থাকায় সবজি চাষিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন যাবত কৃষকরা দাবি জানিয়ে আসলেও হিমাগার নির্মাণ হচ্ছে না। ফলে পাইকারদের নির্ধারিত দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। সবজি দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় অনেক সময় নামমাত্র লাভে চাষির হাতে সবজির মূল্য গুঁজে দেওয়া হচ্ছে।

শঙ্খচরে উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য দোহাজারীতে হিমাগার নির্মাণ করা গেলে বাজারে সবজির দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে আর কৃষকরাও সবজির ন্যায্য দাম পাবে বলে মত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার বলেন, চন্দনাইশ উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটোর চারা লাগানো শুরু হচ্ছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সহায়তা দেওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড