রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুর
বৈচিত্রময় পৃথিবীর এই জীবনে মানুষের নিত্য সঙ্গী সুখ আর দুঃখ। সুখের সাগরে হাবুডুবু খেয়ে কেউ নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়, আবার কেউ দুঃখের দরিয়ায় ভাসতে ভাসতে নিজেকে অযোগ্য-অপ্রয়োজনীয় মনে করে স্বেচ্ছায় জীবন বিসর্জন দেয়। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজীর থাকলেও জীব জগতের অন্য কোনো প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এমন একটি ঘটনাও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই অর্জুন গাছটি তারই প্রমাণ বহন করছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় মরহুম মদিন উল্লাহ চৌধুরী ওরফে বটু চৌধুরীর বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে একটি অর্জুন গাছ। ওষুধি গাছ হিসেবে মানুষের প্রয়োজনে দা, বটি, ছুরি কিংবা লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গাছটিকে প্রতিদিনই ক্ষতবিক্ষত হতে হচ্ছে। আবার নিজের কল্যাণ হবে ভেবে গাছটিকে জড়িয়ে ধরছেন অনেকেই। এভাবে আঘাতের বেদনা আর জড়িয়ে ধরার আনন্দে প্রায় ৭০ বছর পার করেছে অর্জুন গাছটি। প্রায় বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে এখনও গাছটি দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্যই।
জানা যায়, ১৯৬০ সালে বাড়িটি ক্রয় করারও বহু আগে অর্জুন গাছটির জন্ম। পরবর্তীতে গাছটিকে বাঁচিয়ে রেখেই তার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি মসজিদ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ও উত্তর দিকে বিশাল দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কেবলমাত্র ওষুধি গাছ বলে তখন অর্জুন গাছটিকে কাটা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্জুন গাছের ছাল, পাতা ও ফল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছটির কাঠ বেশ শক্ত। এক সময় গরুর গাড়ির চাকা নির্মাণে অর্জুন গাছ ব্যবহৃত হত। গৃহনির্মাণ, কৃষি উপকরণ, জলযান, নৌকা, দাড়, মাস্তুল, খনি ও নলকূপ খননে এই গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়। অর্জুনের ছাল থেকে হৃদরোগের ওষুধ ও পাতার রস আমাশয় রোগের প্রতিষেধক হিসেবে সেবন করা হয়।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাসিন্দা মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, ‘গত ১২ বছর ধরে আমি এনসিসি ব্যাংক লক্ষ্মীপুর ব্রাঞ্চে (বটু চৌধুরীর বাড়ি সংলগ্ন) কর্মরত আছি। হার্টের উপকারে অর্জুন গাছটির ছাল আমিও বহুবার নিয়েছি। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ গাছটির ছাল কেটে নিচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে কেউ কেউ গাছটি জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখেছি।’
বটু চৌধুরী বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমির হোসেন জানান, ‘প্রায় ২৪ বছর ধরে আমি এই বাড়িতে আছি। ছাল কাটতে কাটতে অর্জুন গাছটির বড় একটি অংশ এখন নেই। তবুও গাছটি বেঁচে আছে। এখনও স্থানীয়রা গাছটির উপকারিতা ভোগ করছে।
হামদর্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান জাবেদ দৈনিক অধিকারকে বলেন, অর্জুন একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধি গাছ। এ গাছের পাতা, ফল ও ছাল দিয়ে ভেষজ ওষুধ তৈরি করা হয়। যা হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে খুবই কার্যকরি। এজন্য প্রতিটি বাড়ি অথবা অফিস আঙ্গিনায় পরিকল্পিতভাবে অর্জুনসহ অন্যান্য ওষুধি গাছ লাগানো উচিত বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ মমিন উল্লাহ দৈনিক অধিকারকে জানান, ৭০ বছর ধরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে এখনও শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা অর্জুন গাছটি আমাদের জন্য একটি বাস্তব শিক্ষা হতে পারে। কারণ বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করছেন। তারা ভুলে যাচ্ছেন নিজেদের অস্তিত্ব, নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা। যদিও এমনটা কখনোই কাম্য নয়। তাই জীবন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা খুবই জরুরি।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড